ছবি: সংগৃহীত।
আজকের যুগে বয়স আর কোনো বাধাই নয়, এর প্রমাণ দিলেন কবি আবুল কালাম। ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করার পর, এখন তিনি নতুন স্বপ্ন দেখছেন — স্নাতক হওয়ার। তার অদম্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায় সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবং একটি অনুপ্রেরণার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আলোচিত এই আবুল কালাম আজাদ, যিনি কবি কালাম নামে পরিচিত, সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেছেন।
তিনি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ওই কেন্দ্র থেকেই মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর তার নাম দেশব্যাপী আলোচিত হয়। এক সময়ের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া এক ব্যক্তির, রাত জেগে পড়াশোনা করার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চমক তৈরি হয়। পরে পরীক্ষার ফলাফলে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে পাস করেন। এবার, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তিনি পেয়েছেন জিপিএ ২.৭৭, এবং তার ফলাফল গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কেকেরচর ইউনিয়নের পশ্চিম লঙ্গরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে দশম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। তবে তাঁর মনোবল ছিল শক্ত এবং তিনি দৃঢ় সংকল্প করেন, বয়স যতই হোক এক দিন উচ্চশিক্ষা অর্জন করবেনই। এ লক্ষ্যে ২০২০ সালে তিনি চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম কলেজে বাউবি’র এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন এবং নিরলসভাবে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় তিনি সাফল্য পান। এরপর তিনি আরো উজ্জীবিত হয়ে ভর্তি হন একই কেন্দ্রে এইচএসসি প্রোগ্রামে এবং আবারও রাত জেগে পড়াশোনা করে সফল হন। তবে এখানেই থামছেন না কবি কালাম। তিনি এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য নতুন করে পড়াশোনা শুরু করবেন।
এ প্রসঙ্গে কবি কালাম বলেন, “পারিবারিক কারণে পড়াশোনা করতে না পেরে সব সময় আফসোস হতো। যখন কেউ এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দিতে যেত, তখন খুব খারাপ লাগত। কিন্তু আজ আমি সফল, এবং আল্লাহর রহমত পেলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনও আমার স্বপ্নের একটি অংশ।”
কবি কালাম জানান, "পড়াশোনার প্রতি আমার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই ছিল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা থেমে গেলেও প্রতিদিন পত্রিকা পড়তাম, কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়তাম। বিভিন্ন লেখকের বই পড়তাম এবং নিজে কবিতা, ছোটগল্প, গান লিখতাম। আজও সেই পাণ্ডুলিপি সযত্নে সংরক্ষণ করি।" তিনি মনে করেন, "শিক্ষার কোনো বয়স নেই। পড়াশোনা করলে মন বড় হয়, মানুষকে ভালোভাবে চিনতে পারি, কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।"
এদিকে, কেকেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, "আবুল কালাম একজন সাদা মনের মানুষ। বৃদ্ধ বয়সে তার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। তিনি আমাদের এলাকার গর্ব।"
কবি কালামের সংগ্রামী জীবন ও শিক্ষার প্রতি অটুট ভালোবাসা আজ শুধু শ্রীবরদী নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশে অনুপ্রেরণার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নুসরাত