ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব

শিশির ভেজা  প্রকৃতি জানান দেয় হেমন্ত পেরিয়ে  আসছে শীত। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। শুরু হয়েছে সোনালী ধান কাটা, আবার কেউবা ঘরে তুলছেন আগাম ধান। তবুও নেই, গ্রামীন সংস্কৃতির নবান্ন উৎসবের আমেজ। গ্রাম-বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। অতীতে নবান্নে সোনালী ধান কাটার উৎসবে মুখরিত হতো গ্রামের প্রতিটি আঙিনা। কিন্তু গ্রামীণ জনজীবনে যেন এই চিত্র এখন শুধুই স্মৃতি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সোনালী ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন আমন চাষীরা। প্রতিবছর হেমন্ত ঋতুতে নতুন বার্তা নিয়ে আসে আমন ধান। মাঠে মাঠে ছড়াচ্ছে নতুন ধানের গন্ধ। কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের সোনালি দিন চলছে। কিন্তু আমেজ নেই নবান্নের। একটা সময় এই উৎসবকে ঘিরে বাঙালির ঘরে ঘরে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রাম-বাংলার শিশুরা বইপুস্তুক কিংবা গল্পেই শুনে থাকে নবান্নের কথা। একসময় অগ্রহায়ণ মাস এলেই পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে গ্রাম-বাংলায় জানান দিত নবান্নের কথা। তবে এখন আর তেমন উৎসব চোখে পড়ে না গ্রামীণ জনপদে।নবান্ন উৎসবে সকলের ঘরে ঘরে নতুন আমন ধানের চালের বাহারি পিঠা, ফিরনি-পায়েস, ক্ষীরসহ নানা আয়োজন দেখা যেত এবং আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে বাড়িতে ডেকে বসিয়ে খাওয়ানো হতো।
উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মৌমিতা আক্তার মীম বলেন, দাদা দাদীর কাছে নবান্ন উৎসবের কথা শুনেছি। আগে অনেক ভালো হতো। নবান্নর দিনে একে অপরের বাসায় খেতে যেত কিন্তু বর্তমানে আমাদের গ্রামে সেটা আর দেখি না। নিজেরাই নিজের মতো এখন নবান্ন উৎসব পালন করে।অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রহমান (৮৫) বলেন, হেমন্তের ধান কাটা শুরু হলেই আমার মনে ভেসে ওঠে নবান্ন উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে সেটা আর গ্রাম বাংলায় দেখা যায়। না। আমরা ছোট বেলায় দল বেধে একে অপরের বাসায় খেতাম এবং নবান্ন উৎসবকে নতুনভাবেই বরণ করে নিতাম। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা শুধু নামেই জানে নবান্ন উৎসব। আগের মত তারা আর নবান্ন উৎসব করতে পারে না।
কৃষকদের অনেকেই বলছেন, অভাবে স্বভাব নষ্ট, কুল নষ্ট ভজনে।আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল নবান্ন উৎসব করা সম্ভব হতো। এখন সবকিছু দাম বেড়ে যাওয়ায় আর করা সম্ভব হয় না। একারণে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে।

×