ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

লৌহজংয়ে খাল দখল-ভরাটে ৬ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে, চাষাবাদ ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার,মুন্সীগঞ্জ ॥

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

লৌহজংয়ে খাল দখল-ভরাটে ৬ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে, চাষাবাদ ব্যাহত

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের জমিগুলোতে এখনও পানি। তাই চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে।

দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ। এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক আলু চাষে  বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কার্তিক মাস শেষ, কিন্তু বর্ষার পানি এখনও নামছে না বহু জমি থেকে। বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, খাল এবং নালা দখল করে অবৈধ ভরাট স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি বছরে ৬/৭ মাস থাকে পানির নিচে। যার ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে আলু ধান উৎপাদন করে। বাকি সময় এসব ফসলি জমি থাকে পানির নিচে। এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ উপজেলায় ৭ হাজার ৭৯২ হেক্টর হেক্টর জমিতে আবাদি জমিতে আলু সরিষা বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। এদিকে প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত, আবাদ মৌসম শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময় মত আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ করতে পারছে না। উঁচু জমিতে আগাম স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে। কোন ভাবেই জমির পানি যেন নিস্কাশন হচ্ছেই না। এতে ফসল আবাদে কৃষকরা বিলম্বনায় পড়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাষীদের অভিযোগ জমি সংলগ্ন খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের। প্রান্তিক কৃষকরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে দেরিতে নামায় শীতকালীন ফসলের আবাদ করা যাচ্ছে না। এছাড়া এবছর আলু চাষ ২মাস দেরিতে শুরু হবে এবং সময়ের ২ মাস পরে আলু উত্তোলন হবে। এ সময় বৃষ্টির মৌসুম চলে আসবে। বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হবারও শঙ্কা থাকবে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক মেরাজ শেখ জানান, খাল ভরাটের কারণে বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। হাড়িদিয়া বিলে তার ১০ একর আলুর জমি এখনো পানির নিচে। কৃষক লতিফ শেখ ও জসিম জানান, খাল দখলের কারণে আগের মত ফসলের আবাদ করতে না পারায় আমরা কৃষকরা এখন মরতে বসছি। এই বিলে বর্ষার পানি নিস্কাশনের নুরপুরের খাল, কালুরগাঁও খাল আরেকটা হলো বনসেমন্ত খাল এই  খালগুলো মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে।
খালটি পুনরায় খনন করলে পানি নিস্কাশনে সমস্যা আর থাকবে না। বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে খিদিরপাড়া, ঘোলতলী, ধারার হাট, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসারসহ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের বিলে জমিতে এখনো পানি আটকে আছে। স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টির প্রভাবের বৃষ্টি কারণে এবং জমি থেকে বর্ষার পানি না নামার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন দিশেহারা। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকিয়ে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলী জমিগুলো দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, এ উপজেলায় আমি কিছুদিন হয় জয়েন্ট হয়েছি। এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

×