স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিনিয়ত বাড়ছে কুকুর ও শিয়াল কামড়ানো রোগীর সংখ্যা।কিন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।ফলে এসব রোগীরা কবিরাজি গাছগাছালি ঔষধ ও ঝাঁড়ফুকের দিকে ঝুঁকছেন।এতে করে আহত রোগীদের জলাতঙ্কের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।এ ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকায় অনেকে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,গত দুইমাসে জলাতঙ্ক হয় এমন প্রাণির (কুকুর,বিড়াল, শিয়াল, বাঁদুড় ও বেজির কামড়ে আক্রান্ত রোগী এসেছেন ৪০ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী। এরমধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী ১০ জন এবং ১৫ বছরের উপরে রয়েছেন ৩০ জন।এছাড়াও চলতি মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ১১৩ জনের বেশি রোগী এসেছেন কুকুরসহ অন্যান্য হিংস্র প্রাণির কামড়ে আহত হয়ে।প্রতিদিন হাসপাতালে কুকুর শিয়ালে কামড়ে আক্রান্ত রোগী আসলেও জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষোধক এআরভির (অ্যান্টিবায়োাটিক ভ্যাকসিন) সরবারহ নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।তারা পাচ্ছে না বিনামূল্যে সরকারি ভ্যাকসিন।এতে জলাতঙ্কের ঝুঁকি বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছে সাটুরিয়াসহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ।
কুকুরে কামড়ে আহত ধানকোড়ার গ্রামের সুমি আক্তার বলেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকায় তাদের বাহির থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে হয়েছে।তিনি আক্ষেপ করে বলেন সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন পেলে তাদের অনেক উপকার হতো।
উপজেলার ঘিওর গ্রামের বাসিন্দা নয়ন আলী জানান,বিড়ালের আচঁরে আহত হয়ে টিকা নিতে সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টিকা পাননি তিনি।পরে ফার্মেসী থেকে চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।
দড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা লুতফর মিয়া বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুর বা বিড়ালে কামড়ানো রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হতো, তাহলে এতটা হয়রানি হতো না আমাদের।তিনি বাহিরের ওষুধের দোকান থেকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে অনেকটাই অনীহা প্রকাশ করেন। তাছাড়া গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে কুকুর বা অন্য কোন প্রাণি কামড়ালে তারা শুধু কবিরাজি চিকিৎসার উপর নির্ভর করে।এতে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের সহকারি চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম জানান,সরকারিভাবে বরাদ্ধ না পাওয়ায় হাসপাতালে ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই।তারা রোগীদের চারজনের গ্রুপ করে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। অথবা ওই চারজন নিজেদের টাকায় ভ্যাকসিন কিনে আনলে হাসপাতাল থেকে সেবা দিয়ে থাকে। এতে রোগীদের টাকা খরচ কম লাগে।তবে যেকোন রোগী আসলে তারা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে দাবী করেন।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো:ইমরান হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়,শুধু মাত্র মানুষদেরকেই নয় বরং গবাদিপশুকেও কামড়াচ্ছে কুকুর ও শিয়াল।প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ টি করে গবাদিপশু কুকুর ও শিয়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে।উপজেলায় কুকুর নিধন প্রকল্পটি উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) বন্ধ করে দেওয়ায় পাড়া-মহল্লায় বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা।এসব কুকুরের কামড়ে যেন জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায় সেজন্য নেওয়া হয়েছিল কুকুরকে ভ্যাকসিন (টিকা) দেওয়ার কর্মসূচি কিন্তু বর্তমানে সেটাও বন্ধ রয়েছে।ফলে জলাতঙ্ক রোগের আতঙ্ক বাড়ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মামুন অর রশিদ বলেন,কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে বিভিন্ন হিংস্র প্রাণির কামড়ের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন সরবারহ বন্ধ রয়েছে।ফলে টিকা সরবারহ বন্ধ থাকার কারণে রোগীদের বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।কিন্তু সরকারিভাবে সরবারহ থাকলে বিনামূল্যেই ভ্যাকসিন পান রোগীরা।
আর কে