.
আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। জ্বর, সর্দি, কাশি, ব্রংকিউলাইটিস ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শীতের প্রভাবে হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন বয়স্ক ও শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া, জ্বর ও ডাইরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে পাঁচ জন। বর্তমানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শতাধিক শিশু। এ ছাড়া বহির্বিভাগে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৮৫ শিশু। অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি বাড়তি যতœ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটছে রোগীরা। ভিড় বাড়ছে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে। আক্রান্তদের বেশিরভাই শিশু। ধারণ ক্ষমতার চার গুণ বেশি হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় চলছে চিকিৎসা সেবা। আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্ক তুলনায় শিশুরাই বেশি। বেশিরভাগ শিশুর বয়স দুই থেকে আট মাস। জনবল সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বারান্দাতেও রোগীদের চিকিৎসা চলছে। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ঠান্ডা ছাড়াও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। ১৫ শয্যা বিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক শিশু। প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন কযেকশ’ রোগী। জেলা শহর ও শহরতলির আশপাশ ছাড়াও পাশের উপজেলা থেকে এসে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন শিশুরা।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কুমিল্লা টিলা এলাকার আব্দুল জলিল জানান ‘ছেলেকে নিয়ে সকালে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসলাম। কিন্তু ডাক্তারের সিরিয়াল অনেক লম্বা। এখনো দেখাতে পারিনি। ছেলের দুদিন ধরে নাক দিয়ে পানি ঝরছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন বাচ্চাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখনো ভর্তি করাইনি। ছেলের প্রচন্ড জ্বর ।’
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল এর শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ওমর ফারুক জানান, মৌসুমি বায়ু পরিবর্তনের জন্য ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে খাগড়াছড়িতে। বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে নির্ধারিত সংখ্যার চাইতেও বেশি রোগীর ভিড় থাকায় সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা। আক্রান্তের সংখ্যা শিশুরা সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসার পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন ও পরিচর্যা এবং বাড়তি যতœ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পী চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও গড়ে প্রতিদিন দেড়শ’র বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে গড়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। ঠান্ডাজনিত অন্যান্যা রোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। গত ১ সপ্তাহে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা গেছে ৫ জন শিশু। তাদের মধ্যে ২ জন ছিল নিউমোনিয়া রোগী। আক্রান্ত ৩৮৫ শিশু। তিনি বলেন, শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করা গেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ঝুঁকি অনেকটা কমবে। শিশুদের এ ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও সে অনুপাতে জনবল ও বেড সংখ্যা কম। জেলা সদর হাসপাতালে বেড সংখ্যা ও চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করতে সচেতন নাগরিকরা দাবি জানিয়েছেন।