.
মুন্সীগঞ্জে সিন্ডিকেট আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে প্রতি কেজি আলুর দর এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আলুর দর এখন নিয়ন্ত্রণ করছে উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জের হিমাগার কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট। ভোক্তাদের অভিযোগ পর্যাপ্ত আলু মজুত সত্ত্বেও মনিটরিংয়ের অভাবে অকারণে রেকর্ড দরে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। হিমাগার গেটে আলুর পাইকারি ও খুচরা দরেও রয়েছে বড় তফাৎ। হাত বদলেই বাড়ছে আলুর দাম। গত বছর এই সময়ে খুচরা বাজারে আলুর দর কেজিপ্রতি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এবার আলুর এমন দর বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারি বিক্রেতাদের। আর পাইকাররা দুষছেন হিমাগার সিন্ডিকেট তথা মজুতদারদের।
অভিযোগ রয়েছে- আলুর বেশিরভাগ দলিল এখন বড় মজুতদারদের হাতে। এই কাগুজে দলিল হাত বদলেই দর বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে কতিপয় হিমাগার মালিক বা মালিক পক্ষের লোকজন। চাষির কষ্টের ফসল নিয়ে ফায়দা লুটছে কারা? এই প্রশ্ন করে তা চিহ্নিত এবং মজুতদারি আইনে ব্যবস্থা তথা সিন্ডিকেটে ভাঙতে না পারা এবং ঢিলেঢালা বাজার মনিটরিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোক্তারা। তারা বলেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও আলুর অস্বাভাবিক দাম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ শহরের ভোরের বাজারে এক আলু ক্রেতা বলেন, এ দেশে তো সরকারই নেই। দাম কমাবে কে? যে যেভাবে পারছে, সে সেভাবেই দাম বাড়াচ্ছে। আরেক ভোক্তা বলেন, সিন্ডিকেট করে রাখছে। এজন্য আলুর দাম বাড়ছেই। হাত বদলের মাধ্যমে আলুর দাম বাড়ে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
উত্তেজিত হয়ে আরেক ভোক্তা বলেন, সদরের মুক্তারপুর এলাকার যত বড় বড় কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আছে। প্রত্যেকটা কোল্ড স্টোরেজে প্রচুর আলু মজুত আছে। প্রশাসন অনুসন্ধান করলে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের ভেতরে ওরাই সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছি আমরা। তা না হলে আমরা এত দাম দিয়ে আলু কেনব কেন? সরকার থেকে মনিটরিং করলেও কিছুক্ষণ পর আবার আগের মতো হয়ে যায়।
আলু বিক্রেতা জানান, কোল্ড স্টোরেজ থেকে বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা কম দামে আলু আনতে পারি না। আমরা ৬০ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ক্রয় করে আনি। প্রতি কেজিতে আমাদের ৩ টাকা খরচ আছে। এক কেজি আলু বিক্রি করলে ৩-৪ টাকা লাভ হয়।
মনির হোসেন নামের আরেক আলু ক্রেতা বলেন, ‘কাটা আলু নেমে গেছে। এর পরও দাম কমছে না। আমরা খামু কি কইরা। সরকার না দাম কমায়, কোথায় কমাল? দাম তো আগের থেকে বেশি।’
ফারিয়ার আক্তার নামের এক নারী ক্রেতা বলেন, ‘৮০ টাকা কেজি আলু, খালি আলুর দোষ দিলে হবে, সব জিনিসের দাম বাড়ছে। আমরা বিপদে।’ ভোক্তারা দাবি করেন মজুত অনুযায়ী আলু বের করা হচ্ছে না। এমন নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করা হচ্ছে যেন চড়া দর ধরে রাখা যায়।
বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম জানান, আলুর বাজার এখন মজুতদার সিন্ডিকেটের হাতে। কারণ ছাড়াই ফোনে ফোনে দর নির্ধারণ করছে। এই কৃষকের পুঁজি না থাকায় আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করতে পারছে না। আবার নানা কারণে উৎপাদিত আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব সুযোগে মজুতদার চক্র আলু কিনে নিয়ে সুযোগমতো সুবিধা লুটছে। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
গেল মৌসুমে জেলায় ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। আর এবার ৩৪ হাজার ৬৬৫ হেক্টর টার্গেট নিয়ে নতুন মৌসুমের আলু রোপণ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলার ৫৮ হিমাগারে এখনো ৯৭ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। এর মধ্যে খাবার আলু ৪২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।