জন্ম থেকেই তার দুটি চোখে আলো নেই। তবে স্রষ্টা যেন তার কণ্ঠে সব সুর ঢেলে দিয়েছেন। কানে শুনে প্রায় শতাধিক গান মুখস্থ করেছেন তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি না করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে মনের অব্যক্ত বেদনার কথা ফুটিয়ে তুলছেন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জন্মান্ধ শীতল দাস (২৮)।
জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কাজির তালুক এলাকায় অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। পুরো নাম শীতল চন্দ্র দাস। বাবার নাম হাসিরাম দাস ও মা সারু বালা দাস। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট শীতল। এলাকায় ছোট থেকে বড় এবং বয়োবৃদ্ধদের কাছে গানের শিল্পী হিসেবে পরিচিত। শীতলের মা সারুবালা দাস জানান, ছেলের জন্মের পাঁচদিন পর থেকে চোখে ছানির মতো দেখা যায়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করালেও কোনো কিছু হয়নি। টাকার অভাবে ভালো কোনো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। শীতলের জন্মের প্রায় ৩ বছরের মাথায় তার বাবা মারা যায়। থাকার মতো কোনো জায়গায় নেই, অন্যের জায়গার ওপর থেকে ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে অনেক কষ্টে বড় করেছি। আমি নিজেও এখন অসুস্থ হয়ে গেছি। আপনারা যদি পারেন, আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শীতলের জন্য একটা ঘর করে দিয়েন।
স্থানীয়রা জানায়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারে না শীতল। ভিক্ষা করে নয়, গান গেয়ে তিনি তার সংসার চালাচ্ছেন। তার গান শুনে এখানকার সবাই আনন্দিত। গান গেয়ে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে তার সংসার। তার গানের গলা খুবই সুন্দর। ৫ বছর আগে শীতল বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী একজন বাকপ্রতিবন্ধী।
শীতল চন্দ্র দাস বলেন, আমি ১২ বছর বয়স থেকে এলাকার বিভিন্ন বাজারে এবং বিয়ে অনুষ্ঠানে গান করি। গান গেয়ে যা পাই তাই দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। স্থানীয় কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিয় শিল্পীদের গানের টিউন মোবাইলের মেমোরি কার্ড লোড করা হয়। সেই গানগুলো আমি একবার শুনলে মুখস্থ হয়ে যায়। শীতল গুণী শিল্পী বারি সিদ্দিকী, সুকুমার রায়, এন্ড্রু কিশোরসহ বিভিন্ন শিল্পীর প্রায় শতাধিক গান আমার মুখস্থ।
শীতল আরও বলেন, আমার নিজের থাকার মতো কোনো জায়গা নেই, অন্যের জায়গার ওপর থাকি। আমি গান গেয়ে যা উপার্জন করি তা দিয়ে মা এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকম করে সংসার চলছে। আমার স্ত্রী ফুল মালতী একজন বাকপ্রতিবন্ধী। আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও আমার স্ত্রী পায় না। আমাদের দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আমার থাকার মতো কোনো জায়গানোই। সরকার কিংবা বিত্তবানদের নিকট আবেদন আমার পরিবারের জন্য একটা ঘর করে দিলে ভীষণ উপকৃত হব।
গানেই চলে সংসার
শীর্ষ সংবাদ: