কুমিল্লায় কয়েক শ’ কোটি টাকার মালিক সাবেক রেলমন্ত্রীর মুজিবুল হকের আলোচিত সেই ভাতিজা তোফায়েল আহমেদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাতে জেলার চৌদ্দগ্রামের ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা গ্রাম থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত ৮ নভেম্বর ‘সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা তোফায়েল পলাতক, রেল সিন্ডিকেটের ডজনখানেক লুটেরা এখনো অধরা’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাসের ৮ যাত্রী পুড়িয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত ৫ বারের এমপি, হুইপ ও সাবেক রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের আপন ভাতিজা চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারা গ্রামের আম্বর আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ। তিনি ক্ষমতার প্রায় ১৬ বছরে চাচার (কাকা) দাপট খাটিয়ে চৌদ্দগ্রামসহ দক্ষিণ কুমিল্লার ঠিকাদারি বাণিজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন। শূন্য থেকে সূবর্ণ এ সময়ে কয়েক শ’ কোটি টাকার মালিক বনে যান তোফায়েল। তিনি এলজিইডি, শিক্ষাপ্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ত্রাণ ও পুনর্বাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি কাজে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। তার দাপটে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার লোকজন ছিলেন অতিষ্ঠ। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই তোফায়েলও কাকার পথ ধরে পলাতক ছিলেন। সূত্র জানায়, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্যালক নাছির, স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তা, রুপম মজুমদার, খালেদ মাহমুদ চঞ্চল, আবুল বশর ও বেশ কয়েকজনসহ বিশ^স্ত নিকটাত্মীয়ের নিকট নগদ ও ব্যাংক হিসাবে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে বলে ঢাকা, কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রামে দলের নেতাকর্মীসহ সচেতন মানুষের মধ্যে বেশ গুঞ্জন রয়েছে। এদের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের আমানগ-া গ্রামের আবুল বশর নামের এক গৃহকর্মী প্রায় ৩ বছর আগে মুজিবুল হকের গচ্ছিত প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে দুবাই পাড়ি জমানোর বিষয়টি তৎসময়ে এলাকায় বেশ আলোচিত ছিল। এছাড়া মন্ত্রীর শ^শুর বাড়ি চান্দিনার মিরাখোলা এলাকায় স্ত্রী-শাশুড়ি-শ্যালকদের নামে কৃষি জমি ক্রয়ের খবরও মিলেছে। এরই মধ্যে বুধবার রাতে তোফায়েল আহমেদকে আটকের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে মন্তব্য তুলে ধরেন এলাকার জনগণ। পুলিশ জানায়, ২০১৫ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ৮ যাত্রী নিহতের ঘটনায় ওই সময় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করে থানার তৎকালীন পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর একই ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে পাল্টা মামলার আবেদন করেন নাশকতা কবলিত ওই বাসটির মালিক চৌদ্দগ্রামের আবুল খায়ের। আদালতের আদেশে পরে চৌদ্দগ্রাম থানায় এফআইআর করা হয়।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মশিউর আলম জানান, বুধবার রাতে তোফায়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার এজাহারনামীয় ১৩০ জন আসামির মধ্যে ১৫ নম্বর আসামি তোফায়েল। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত আগামী রবিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। তিনি আরও জানান, এ মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব এ কে এম গোলাম কিবরিয়া মজুমদার ও আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম সেলিম আদালতের আদেশে দুই দফায় চার দিনের রিমান্ডে আছেন।
রাজু