ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শিল্পপতিকে ৭ টুকরো করে পরকিয়া প্রেমিকা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০৬:৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শিল্পপতিকে ৭ টুকরো করে পরকিয়া প্রেমিকা

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার রুমা আক্তার। ছবি: সংগৃহিত

অবৈধ সম্পর্কের জেরে শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে জবাই করে হত্যা করেন পরকীয়া প্রেমিকা রুমা। এরপর তিনি মাসুমের লাশ গুম করার উদ্দেশে টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরে সিএনজিতে করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেন। এমন ভাবেই পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন রুমা।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রূপগঞ্জের পূর্বাচলে জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২) সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে গুলশান থানায় একটি জিডির সূত্র ধরে লাশের পরিচয় জানতে পারি। হত্যাকাণ্ডে ভুক্তভোগী হলেন ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। তিনি বিবাহিত এবং তার সংসারে সন্তানও রয়েছে।

এসপি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মোসা. রুমা আক্তারকে (২৮) রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আসামির দেখানো স্থান থেকে একটি চাপাতি, হ্যাক্সে ব্লেড, ভুক্তভোগীর পরিহিত সাফারি, একজোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমা জানান, রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি শিল্পপতি মাসুম অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। বিষয়টি জানতে পেরে রুমা রাগে, ক্ষোভে তাকে খুন করেন।’ 

রুমার জবানবন্দির বরাতে পুলিশ সুপার জানান, গত ১০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মূলত সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে তারা একত্রিত হতেন। প্রথমে ব্যবসায়ী মাসুমকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়। এরপর চাপাতি দিয়ে তাকে জবাই করে লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। সেই টুকরো টুকরো অংশ বিভিন্ন স্থানে ফেলেন।

গ্রেপ্তার রুমা আক্তার ময়মনসিংহ গৌরিপুর থানার তারাকান্দা এলাকার নজর আলীর মেয়ে। 

এসপি আরও জানান, এ ঘটনায় আরও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা এ ঘটনায় জড়িত কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু তার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনান দাবি জানান। তিনি বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর শরীর যেভাবে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশের পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টর থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করা হয়, জানায় রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশের একটি লেকের পানিতে হাত ধোয়ার সময় দুর্গন্ধ অনুভব করেন এক রিকশাচালক। দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকজনকে ডাকেন। তারা পলিথিনে মোড়ানো তিনটি ব্যাগ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সেগুলো উদ্ধার করে এবং কালো রঙের ব্যাগগুলোর মধ্যে থাকা লাশের টুকরোগুলো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে নিহতের ছেলে সেখানে গিয়ে তার বাবার লাশের টুকরোগুলো শনাক্ত করেন।

নুসরাত

×