উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সম্প্রতি জমজ শিশুদের বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে জড়ো করে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
রংপুরের বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে এক সাথে পড়াশোনা করছে ২০ জন যমজ শিশু। তাদের উপস্থিতি বিদ্যালয়ে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের মধ্যে আগ্রহের সঞ্চার করেছে। তবে, তাদের মুখাবয়ব প্রায় একরকম হওয়ায়, কে কোনজন—এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে মাঝে মধুর বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়।
গত সোমবার, বিদ্যালয়ে এই বিশেষ পরিস্থিতি দেখতে যান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উজ জামান। তিনি যমজ শিশুদের একটি কক্ষে একত্রিত করে তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া, শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখার জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দেন তিনি, যাতে এসব শিশুদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়।
কথা হয় ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও মিতা সিনেমা হল রোডের দিলদার আলী ও রেশমা দম্পতির সঙ্গে। রেশমা আক্তার বলেন, এর আগেও তার ২ জন যমজ শিশু পড়াশোনা করেছে। ওরা এখন চেতনা বিদ্যানিকেতনে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে আমার আরো যমজ দুই শিশু রুকু ও রিভা বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এ কারণে আমাকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে হয়। যজম শিশুদের মধ্যে মেলবন্ধন ও চলাফেরা দেখে ভালো লাগে। বিশেষ করে ২০ যমজ শিশু দেখে নিজেকে আমার ধন্য মনে হয়। ওরা সবাই যেন আমার নিজের সন্তানের মতোই।
শিশু শ্রেণির যমজ দুই শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমানের মা মোস্তফাপুর গ্রামের বৃষ্টি আক্তার বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করছি। তাদের চাওয়া-পাওয়া সব একই রকম। একজন বিদ্যালয়ে না আসলে আরেকজন আসতে চায় না। একজন তাড়াতাড়ি যেতে চাইলে আরেকজন আর অপেক্ষা করতে চায় না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় না। আমরা সবকিছু মেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বরং খুব লাগে যখন ২০ যমজ শিশুদের সবাই একসঙ্গে হয়। ওদের নিয়ে তো সবার মধ্যে বাড়তি আনন্দ, অনুভূতি ও ভালোবাসা কাজ করে।
বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষক অনিতা রানী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমন অনেক যমজ শিশুকে শিক্ষা দিয়ে আসছি। ক্লাসে তাদের আচরণ দু’জনেরই একই রকম হয়। বাথরুমে কেউ একজন যেতে চাইলে অন্যজনও যেতে চায়। তবে এই সুবিধাগুলো আমরা দিয়ে থাকি, কারণ আমরা ওদেরকে বুঝতে পারি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে ৬০৭ শিশু। শিক্ষক আছেন ১৩ জন। রংপুর জেলায় ভালো ফলাফলের জন্য সুনাম থাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। বছরে বছরে এখানে শিক্ষার্থীও বেড়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মইনুল ইসলাম শাহ বলেন, আমি গর্বিত এজন্য যে, অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের অন্য প্রতিষ্ঠানে না দিয়ে আমার এখানে ভর্তি করেন। আমার বিদ্যালয়ে ২০ যমজ শিশু রয়েছ। এসব যমজ শিশুরা দেখতে অভিন্ন হওয়ায় কখনো কখনো ক্লাসে শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। তবে যমজ শিশুদের ওদের সহপাঠী ছাড়াও অন্য শিশুরা বেশ পছন্দ করে। আমরা শিক্ষকেরাও তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখি।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক যমজ শিশুর অভিভাবক বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। তারা সন্তানের প্রতি খুব খেয়াল রাখে। অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো থাকে এবং বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের যোগাযোগ হয়। প্রতিবছরই আমাদের শিশুরো ভালো ফলাফল করে আসছে।
নুসরাত