ভিডিও থেকে ছবি
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানায় পুলিশের উপস্থিতিতে বাদী-বিবাদীর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা লেনদেনের ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত, এক এসআই বদলিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তারা হলেন- সাময়িক বরখাস্ত সেন্ট্রি কনস্টেবল মুকতাদির, গাজীপুর উত্তর মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি তদন্ত অফিসার এসআই আসাদুজ্জামান ও এক ডিউটি অফিসার।
অভিযোগ তথ্যে জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন টুটুল সরকার। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে টুটুল সরকারকে। এর পরই থানা হাজতে বন্দী থাকা টুটুল সরকারকে নানা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদার মহিউদ্দিন কৌশলে টুটুলের কাছ থেকে দাবিকৃত ১৯ লাখ টাকা আদায় করে নেয়।
হাজতখানায় থাকা আসামির কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা গুণে গুণে নিতে দেখা যায় আসামির হাত থেকে। থানার হাজতখানার ভেতরের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলে ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে আসে। দেশব্যাপী আলোড়িত হয় ঘটনাটি।
ফাঁস হওয়া ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, থানার হাজতখানার লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে গুণে গুণে ১ হাজার, ৫শ ও ১শ টাকার বান্ডিল হাতবদল করছেন এক ব্যক্তি। হাজতের বাইরে থেকে সেই টাকার বান্ডিল গুনে কালো ও সাদা রঙের দুটি শপিং ব্যাগে রাখছেন। পাশে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য।
ভিডিওর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজতখানার ভেতর থেকে টাকা গুনে দিচ্ছেন মোশতাক মোশাররফ টুটুল সরকার। পুলিশের উপস্থিতিতে হাজতির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও আরিফুর রহমান খান।
থানার হাজতখানা থেকে টাকা লেনদেনের ভিডিওটি গত ২৭ অক্টোবরের। পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টুটুল সরকারের ব্যবসায়ী অংশীদার মহিউদ্দিন। টুটুল সরকার ও মহিউদ্দিন যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। টাকার লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল আগ থেকে। টুটুল থানায় আটক হলে পাওনা টাকা আদায়ের সুযোগ নেয় মহিউদ্দিন। আইনজীবী হিসাবে টুটুল সরকারের ফুফাতো ভাই জিএম ইব্রাহিম হোসেন থানায় গেলে ওসি কায়সার আহমেদ তাঁর পেশা সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁকেও চাদাবাজি মামলায় আটক করে।
টঙ্গী থানা হাজতে টুটুল সরকারকে আটকিয়ে টাকা আদায় করে দেওয়ার অভিযোগে ৪ নভেম্বর সেনাপ্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, জিএমপি কমিশনারসহ আট সংস্থায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন টুটুলের ফুফাতো ভাই আইনজীবী জিএম ইব্রাহিম হোসেন।
আইনজীবী তার অভিযোগে বলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে টুটুলের বোন মায়া সরকারের কাছে ৭৪ লাখ টাকা দাবি করে মহিউদ্দিন ও আরিফ। এর বিনিময়ে টুটুল ও ইব্রাহিমকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয় তারা। টাকা না দিলে তাদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকিও দেয়া হয়। এ ছাড়া পুলিশকে দিয়ে মারধর করানোর ভয় দেখানো হয়।
শেষ পর্যন্ত ১৯ লাখ টাকা দিতে সম্মত হন টুটুল ও ইব্রাহিমের স্বজনরা। পুলিশের সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা থানা হাজতে টাকা নিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরে সেই টাকা থানা হাজতের ভেতর থেকে গুনে গুনে টুটুল সরকার নিজ হাতে অভিযুক্ত মহিউদ্দিন ও আরিফুলকে দেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি কায়সার আহমেদের কাছে ফাঁস হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসায়িক পার্টনারের দাবি করা টাকা পরিশোধ করে হলেও মামলা থেকে ছাড়া পেতে টুটুল সরকার ও তার পরিবার টাকা লেনদেনের এ পথে বেছে নেন। তারা থানায় খাবারের ব্যাগে করে টাকা এনে থাকতে পারেন। টাকা দেওয়ার লেনদেনের প্রমাণ রাখার জন্য হয়তো ভিডিও করেছে তারা।
এসআর