ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শীতে সরগরম শুঁটকিপল্লী নদী ও সাগরপাড়ে অন্যরকম ব্যস্ততা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

শীতে সরগরম শুঁটকিপল্লী নদী ও সাগরপাড়ে অন্যরকম ব্যস্ততা

শীত মওসুম এলেই শুঁটকিপল্লীর ব্যস্ততা বাড়ে। কারণ শুষ্ক মওসুমে বৃষ্টি না থাকায় দ্রুত সময়ে শুঁটকিতে পরিণত হয় মাছ। চট্টগ্রামের শুঁটকি একসময় দেশজুড়ে বিখ্যাত ছিল। এখন সেই জৌলুস না থাকলেও প্রতিযোগিতার বাজারে আলাদা কদর ফুরিয়ে যায়নি।
চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা বাকলিয়া বাস্তুহারা পাড়া, ইছানগর, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট, ফিশারি ঘাট, চাক্তাই, রাজাখালী, মইজ্যারটেক ও জুলদা এলাকায় চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম। আগে চট্টগ্রামে অগণিত চাতাল (শুঁটকি তৈরির চত্বর) ছিল। এখন বাঁশের মাচায় বিশেষভাবে তৈরি সেসব চাতাল কমে এসেছে। ফলে ৪৫ থেকে ৫০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরির স্থলে এখন ১৫ থেকে ২০ ধরনের শুঁটকি হয় চট্টগ্রামে।
কর্ণফুলী তীরসংলগ্ন এলাকাজুড়ে চলছে শুঁটকি তৈরি। বর্ষার শেষ হতেই নদীর তীরে বিশেষ উপায়ে বাঁশের মাচা তৈরি করে কাঁচা মাছ শুকানো শুরু হয়েছে মাস দুয়েক আগে থেকে। চাতালগুলোতে সাগর থেকে আনা মাছের আঁশ পরিষ্কার করে সূর্যের তাপে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি। বর্তমানে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই মাছ শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তামুক্ত চাতাল মালিকরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে  প্রায় ৩০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। চট্টগ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত, আমেরিকা,  হংকং, সিঙ্গাপুর,  দক্ষিণ  কোরিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে।  
চট্টগ্রামের শুঁটকি ব্যবসা বহু প্রাচীন ও বংশ পরম্পরায় পরিচালিত।  দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জসংলগ্ন একটি বিশাল শুঁটকি বাজার রয়েছে, যা শুঁটকিপট্টি নামেই দেশে পরিচিত। এছাড়া কক্সবাজারের নাজিরারটেক, সোনাদিয়ার চর, মহেশখালীতে রয়েছে শুঁটকিপল্লী। সেসব জায়গা থেকেও শত শত কেজি শুঁটকি আসে নগরীর শুঁটকিপট্টিতে।
চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র শুঁটকি উৎপাদন বিপণন সমবায় সমিতির নেতারা জানিয়েছেন,  এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে কাঁচামাছ শুকিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তাই প্রতিচাতাল থেকে দেড় থেকে দুই লাখ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হবে আশা করা যাচ্ছে। এবার আশানুরূপদ আয় করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। তবে পরিবহন ও মাছের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত মহানগরীর ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর ক্ষেতচর, রাজাখালী, দক্ষিণকূলের খোয়াজনগর,  আনোয়ারা উপূকলের চাতালগুলোতে শুঁটকি উৎপাদন চলছে প্রতিযোগিতা দিয়ে। এখানকার চিংড়ি ও লইট্টা শুঁটকির চাহিদা দেশজুড়ে। এছাড়া ছুরি, কেচকি, মলা, ফাইশ্যা, হাঙরের বিভিন্ন অংশ, পোপা, বাইলা, কোরাল, লাক্ষা, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। শুঁটকির মধ্যে সবচেয়ে দামি লাক্ষা ও রূপচাঁদা।
গভীর সমুদ্র থেকে জেলেদের সংগ্রহ করা মাছ কর্ণফুলীর তীরে আনা হয়। সস্তা শ্রমিক ও নৌপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে  চট্টগ্রামের শুঁটকিপল্লী জনপ্রিয় হলেও এখন সুন্দরবনের দুবলা ও কক্সবাজারের নাজিরারটেকের শুঁটকির কাটতি বেশি। তবে চট্টগ্রামে সাগরের মাছের পাশাপাশি জাহাজে আসা মাছের সরবরাহের কারণেই মহানগরীর শুঁটকি ব্যবসার রমরমা অবস্থা বলে জানিয়েছেন শুঁটকি রপ্তানিকারকরা।
অপরদিকে চাতাল শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কাজ করতে হয় দৈনিক ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকার বিনিময়ে।  এসব কাজও দৈনিক ভিত্তিতে। রোদ্রোজ্জ্বল থাকার কারণে প্রতিদিন শুঁটকি তৈরির কাজ চলছে । তবে চাতাল কমে যাওয়ায় শ্রমিক বাড়লেও কাজের সুযোগ কমেছে।

×