ইলিশের বাজার দখল করেছে পাঙাশ মাছ।
শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর ইলিশের বাজার দখল করেছে পদ্মার পাঙাশ মাছ। পদ্মার সুরেশ্বর এলাকায় এখন ইলিশ নেই বললেই চলে। তবে ইলিশের অভাব পূরণ করছে পদ্মার সুস্বাদু পাঙাশ মাছ।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে সুরেশ্বর মাছ বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়ৎদারদের মাছের ডালাতে কোন ইলিশ মাছ নেই, পদ্মার পাঙাশ মাছে সয়লাব হয়ে গেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে শরীয়তপুরে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। পাঙাশ মাছ হাসি ফুটিয়েছে জেলেদের।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ১৩ অক্টোবর হতে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে মাছ শিকার বন্ধ ছিল। ৪ নভেম্বর ভোর রাত হতে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। ওই দিন থেকেই জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ মাছ ধরা পড়তে থাকে। পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের নড়িয়ার চরআত্রা, নওপাড়া, ঘরিসার, ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা, তারাবুনিয়া ও চরভাগা এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেরা পাঙাশ শিকার করছেন।
পদ্মায় এতো পাঙাশ মাছ গত ৪০ বছরেও দেখেননি বলে জানিয়েছেন সুরেশ্বের বাজারের মাছের আড়ৎদার সাইফুল ইসলাম দেওয়ান। তিনি জানান, ৫ থেকে ১২ কেজি ওজনের পাঙাশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। সারারাত ভরে মাছ শিকার করে সকালে তা বিক্রি করছেন নড়িয়ার সুরেশ্বর মাছের পাইকারি বাজারে। এই বাজারে ৩২টি আড়ৎদার রয়েছে। দুই থেকে আড়াই হাজার জেলে এখানে মাছ বিক্রি করতে আসেন। প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা মাছ বিক্রি হয় এখানে। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখানে। তবে পাঙাশের আমদানির সাথে দাম উঠানাম করে। আমদানি বেশি হলে দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় নেমে আসে।
মাছের আড়ৎদার নান্নু বেপারী বলেন, আগে সুরেশ্বর বাজারটি ইলিশ মাছের পাইকারী বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে ইলিশ মাছ ভরপুর ছিল। এখন ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে। তবে ইলিশের চাহিদা পূরণ করেছে পদ্মার পাঙাশ মাছ।
এদিকে, পদ্মার পাঙাশ সুস্বাদু হওয়ায় শরীয়তপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর থেকে ক্রেতারা এখানে মাছ কিনতে আসেন। ঢাকা থেকে সুরেশ্বর বাজারে পাঙাশ মাছ কিনতে এসেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, সুরেশ্বর বাজারে পদ্মার পাঙাশ পাওয়া যায়। তাই তিনি এখানে পাঙাশ মাছ কিনতে এসেছেন এবং ৮০০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি ওজনের পাঙাশ মাছ কিনতে পেরে তিনি খুশি।
ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বোরোকাঠি এলাকার জেলে মোবারক হোসেন ২৫ বছর ধরে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি কখনো সারা বছর জুড়ে মাছ শিকার করেও ৬০/৭০ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারেননি। অথচ, গত কয়েকদিনে তিনি পাঙাশ মাছ বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন।
নদীতে জেলেদের জালে এতো পাঙাশ ধরা পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, নড়িয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মৃধা বলেন, গত ২২ দিন যাবত নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তাই ইলিশের পাশাপাশি পাঙাশ মাছ উন্মুক্ত প্রবাহমান নদীতে বিচরণের সুযোগ পেয়েছে। এজন্য জেলেদের জালে প্রচুর পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে।
এম হাসান