সুন্দরবনে শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হয়েছে। তিনদিন ব্যাপি এ রাস উৎসব বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়। রাস পূর্নিমা উপলক্ষ্যে এ উৎসব চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। দুবলার চর সংলগ্ন আলোরকোলে কুঙ্গা নদীর মোহনায় সনাতন ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমায় পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য বৃহস্পতিবার ভোরে বন বিভাগের নির্দিষ্ট কার্যালয় থেকে অনুমতি ও নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন হাজার হাজার পূর্ণ্যাথী। এ উৎসব উপলক্ষ্যে প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু জানান, এবার রাস পূজা ও পূন্যস্নান উপলক্ষে কোন প্রকার মেলা হবে না। সন্ধ্যার মধ্যে বেশিরভাগ পূন্যার্থী দুবলায় পৌছে যাবে। রাতে বিশ্রাম ও অনানুষ্ঠানিক পূজা আর্চনা করবেন। পূন্যাথীরা রাতে জলযানে (লঞ্জ, ট্রলার ও নৌকা)অবস্থান করবেন। আবার শুক্রবার সকালে চরে ঘোরাঘুরি ও সন্ধ্যায় মূল মন্দিরে আনুষ্ঠানিক রাস পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসময় ভক্ত ও পূন্যার্থীদের কোন প্রকার মানত বা বিশেষ কোন কাজ থাকলে তারা সেগুলো সম্পন্ন করবেন। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে পূন্যস্নানের মাধ্যমে এই রাস উৎসব শেষ হবে।
এদিকে রাস উৎসবকে ঘীরে যাতে অপরাধি চক্র কোন অপরাধ সংগঠিত করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ও নৌ পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম।
তিনি বলেন, রাস উৎসব ঘীরে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সকল নিয়ম মেনেই পূন্যাথী ও দর্শনার্থীদের বনে প্রবেশ করতে হবে। কোন পূন্যাথী সিঙ্গেল ইউজ (একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়) এমন প্লাস্টিক নিয়ে বনে প্রবেশ করতে পারবে না। রান্নার জন্য জ্বালানী নিয়ে যেতে হবে, কোনভাবেই বনের অভ্যন্তরের কোন গাছ কাটতে পারবে না। বনের অভ্যন্তরে থাকাকালীন কোন বন্য প্রাণি শিকার করতে পারবে না। যদি কেউ শিকারের মত অপরাধের সাথে যুক্ত হয়, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বনে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে, তিনি তাৎক্ষনিকভাবে শিকারীদের সাজা প্রদান করবেন।
রাস উৎসবের ইতিহাসঃ
দুবলার চরের রাস উৎসব প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। তবে বেশিরভাগ সনাতন ধর্মালম্বী ও বনজীবীরা মনে করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে বসে রাসমেলা।
আবার কারও কারও মতে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন।
তবে এক সময় রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল পরিমান ভক্ত ও দর্শনার্থী আসলেও, কয়েক বছর ধরে শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা যেতে পারেন এই পূজায়।
সুন্দরবনে তিনদিন ব্যাপি রাস উৎসব শুরু
শীর্ষ সংবাদ: