ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

মা কবরে বাবা কারাগারে: তিন বোন নিয়ে দিশেহারা শিশু সাজ্জাদ

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৪ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০৩:৩৪, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

মা কবরে বাবা কারাগারে: তিন বোন নিয়ে দিশেহারা শিশু সাজ্জাদ

শিশু সাজ্জাদ

দুই সন্তানকে জন্ম দিয়ে মারা গেছেন স্ত্রী। সদ্যজাত দুই সন্তানকে নিয়ে দুই চোখে যখন আঁধার ঠিক তখনি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার জামাল মিয়া। মাকে হারিয়ে ও বাবা গ্রেপ্তার হওয়ায় সদ্যজাত দুই বোনকে নিয়ে অথৈই সাগরে ছোট দুই ভাই-বোন। এখন তাদের ভবিষ্যত যেন অন্ধকারে। জামাল কোন রাজনীতি না করলেও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করার ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছে স্বেচ্ছাসেক দল নেতা হত্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে দ্রুত তদন্ত শেষে জামালকে মুক্তি দেয়ার দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের ১৩ বছরের শিশু ও স্থানীয় এমএমখান উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ মিয়া। বোন ফারিয়ার বয়স ৭ বছর। সদ্যজাত দুই বোনের জন্ম হওয়ার ৬ দিনে মাথায় পরপারে পাড়ি দেন মা সাথি বেগম। মাকে হারিয়ে চোখে আঁধার নেমে আসলেও বাবাকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিন দেখছিলো সাজ্জাদ। তবে বাবা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় সেই ভবিষ্যৎ যেন এখন ফিকে হতে বসেছে।

গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে নিজ বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় জামাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর এলাকাবাসী পুলিশের দ্বারস্থ হলেও পারেনি ছাড়াতে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগরে পাঠানো হয়। এরপর থেকে শিশু সাজ্জাতের চোখে যেন অন্ধকার নেমে আছে। ছোট তিন বোনকে নিয়ে অথৈই সাগরে নিমজ্জিত হয় সাজ্জাত। সদ্যজাত দুই বোনকে দেখাশোনা করছেন নানি ও দাদি। আর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চলছে এখন সাজ্জাদের পরিবার।


তবে পরিবারের অভিযোগ, কোন রাজনীতি না করলেও জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনি তাকে ছাড়ানা জন্যও দাবি করা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা এমন অভিযোগ ভুক্তোভোগী পরিবারের। তবে প্রতিবেশিরা বলেছে, জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরেও তাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এতে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে চার ভাইবোন। তাই দ্রুত জামালের মুক্তি দাবি স্থানীয়দের।

ভুক্তোভোগি জামাল মিয়ার শিশু সন্তান সাজ্জাদ জানায়, এক মাস আগে আমাদের মা মারা গেছেন। এখন পুলিশ বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। বাবা এখন জেলে। ঘরে অসুস্থ দাদি। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। আত্মীয় স্বজন যা দিচ্ছে তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলছে। এখন আমার ও আমার বোনের লেখাপাড়া বন্ধ হতে বসেছে। আমরা এখন কীভাবে বাঁচব?’ কয়েকদিন পর আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। আমার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দেবে? আমার এক মাস বয়সী দুই বোনের দুধের টাকা কে দেবে? আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল বলে আমরা জেনেছি। তাই তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার দুটি সদ্যজাত সন্তানসহ ছোট ৪টি সন্তান রয়েছে বলে জানা ছিলো না।

রিয়াদ

×