বগুড়ায় আমন ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক Ñজনকণ্ঠ
‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে, অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের খেতে, মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার- চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ, তাহার আসাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান।’ জীবনানন্দ দাসের কবিতার সেই ধানের খেতের গন্ধ এখন চারদিকে। আর কয়েক দিন পরেই অগ্রহায়ণ। পাকা ধানে ভরে উঠবে কৃষকের গোলা। ধানের ডগায় শিশিরের ছোঁয়ায় ঠিকরে পড়া সকালের রোদ্দুর নতুন দিনের গল্প ছড়িয়ে দেয় আলোর ধারায়। আর হেমন্তের এই সকাল-বিকেলে কুয়াশা ভেদ করে মায়ার চাদরের মতো আলো ধান খেত ছাড়িয়ে দিগন্ত মিশেছে। বিস্তীর্ণ খেতের পর খেতে পাকা ধানের দোলা হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য। আর কার্তিকের শেষে অগ্রহায়ণের শীতের আগমনীতে কুয়াশার মায়াবি এমন দৃশ্য এখন শস্য ভাণ্ডারখ্যাত বগুড়াসহ সবখানে। ধান খেত থেকে কৃষকের বাড়ির উঠোন, সবখানে এখন কৃষক কৃষানীর ব্যস্ততা। কারণ নবান্ন তো এসেই গেল। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটা। অগ্রহায়ণ গড়াতেই পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই মৌসুম শুরু হবে। এখন চলছে আগাম জাতের আমন ধান কাটা। বগুড়াতেও চলছে আমন ধান কাটা মৌসুম। কৃষি বিভাগ বলছে এবার ধান অনেক ভালো হবে। তারা আশা করছে বাম্পার ফলনের।
বোরো ও আমন মৌসুম শস্যে আবাদের প্রধান দুই উৎস হলেও আমনের আবেদন আমাদের গ্রামীণ বাংলার তথা বাঙালির জীবন যাত্রায় এক চিরায়িত ঐতিহ্যে তুলে ধরে। আমন শুধু ধানের একটি মৌসুম নয়। ঋতু বৈচিত্র্যের পরিক্রমায় এর সঙ্গে জড়িত লোকজ ধারার নানা অনুষঙ্গ। হেমন্তের কার্তিক-অগ্রহায়ণ শুধু ধান খেত নয়, শীতের সকালে খেজুরের রস আস্বাদন এক মনোলোভা দৃশ্য। কৃষকের ঘরে ঘরে ধান কাটা-মাড়াই, সিদ্ধ ধানের মন জুড়ানো গন্ধের সঙ্গে নবান্নের উৎসব মনে করে দিয়ে যায় শিকড়ের ঐতিহ্যের কথা। এ সবই তো হেমন্তের কথা। ধান কাটা শুরু হয়েছে কার্তিকের শেষ থেকে। তবে এখনো তা পুরোদমে শুরু হয়নি। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন আগাম জাতের ধান কাটা চলছে। অগ্রহায়ণ শুরু হওয়ার পর তা সবখানে শুরু হবে।
শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের তীতখুর গ্রামের সাইদী রহমান ৫ বিঘা জমিতে বিআর ৪৯ জাতের ধান আবাদ করে এখন কাটা শুরু করেছেন। বিঘাপ্রতি ১৫/১৬ মণ ধান পেলেও দাম নিয়ে তার চিন্তা। স্থানীয় আড়তদার বলেছে চাল আমদানি হলে দাম কমবে। জানালেন বর্তমানে ধানের দাম টেঙ্গামাগুর হাটে প্রায় সাড়ে ১১শ’। ওমরদীঘি এলাকার বদর আলী তার ৪ বিঘা জমিতে বিঘাপ্রতি ধান পেয়েছেন প্রায় ১৮ মণ। তিনি জানালেন তার এলাকায় ধানের কেনা-বেচা এখনো শুরু হয়নি। বগুড়ায় এবার ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৬ টন। এবার গড় ফলন প্রায় ১৬ মণ। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতলবুর রহমান জানিয়েছেন তারা এবার অন্য বছরের চেয়ে ভালো ফলন আশা করছেন।