ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গার সাবেক সংসদ সদস্য পুলিশ সুপারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ২০:১৮, ১২ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার সাবেক সংসদ সদস্য পুলিশ সুপারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বালি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে পুলিশ দিয়ে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীসহ জনের বিরুদ্ধে ১১ বছর পর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার বিকালে বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভীন (৪০) বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন।

দর্শনা আমলী আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিপন আলী বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সিআইডিতে তদন্ত করার জন্য প্রেরণ করেছেন।

মামলার বিষয়টি সোমবার সন্ধ্যার পর নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের আইনজীবী মাসুদ পারভেজ রাসেল।

মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, সাবেক কাউন্সিলর দর্শনা পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ ¤পাদক জয়নাল আবেদীন নফর, সাবেক দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ ¤পাদক আলী আলী মুনসুর বাবু (৫৫), দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহিম (৫৫), সাবেক দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবিব (৫৮), একই থানার কনস্টেবল সাজেদুল (৪০), দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই দেবাশীষ (৪০)সহ অজ্ঞাত - জন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৩ সালে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের গ্রামের বালি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনকে (৪৫) দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে সাবেক  চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চুয়াডাঙ্গা- আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মুনসুর বাবু, আলীহিম পুলিশের ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবী করে। বিল্লাল হোসেন চাঁদা দিতে রাজি না হলে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের ইনচার্জ মিজানুর রহমান মিজানকে তারা বিষয়টি জানায়।

সময় দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর তার ভাই আলী মুনসুর বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর আলীহিমের নির্দেশ মতে সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল রহিম শাহ চৌধুরী, দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবিব, কনস্টেবল সাজিদুর রহমান, এএসআই দেবাশীষ, বিল্লাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

২০১৩ সালের ১১ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে ওই দিন দিনগত রাত আড়াই টার দিকে পুলিশ দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর বিল্লাল হোসেনকে তার বাড়ী থেকে অপহরণ করে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর উজলপুর রাস্তার হরচরার মাঠে নামক স্থানে নিয়ে যায়। সময় আসামীরা বিল্লালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে একাধিক গুলি করে হত্যা করে। পরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল হোসেন নিহত বলে নাটক সাজায়।

পর দিন সকালে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিল্লাল হোসেনের বাম বুকে, বাম বগলের নিচে, ডান উরুসহ একাধিক স্থানে গুলির চিহ্ন দেখতে পায়। পিঠে দুহাটুর নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা দেখা যায়। সময় বিল্লালের দুই হাতে হ্যান্ডকাপ ছিল। তার ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলের নখ উপড়ানো হয়। পরের দিন এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

বাদী জানান, ঘটনায় আদালতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা শুনে আসামীরা নিহত বিল্লাল হোসেন তার পরিবারকে অপহরণ গুম খুনের হুমকি দেয়। দেশে সরকার পতনের পর ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের আইনজীবী মাসুদ পারভেজ রাসেল জানান, বিজ্ঞ আদালতের বিচারক বাদীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সিআইডিতে প্রেরণ করেছে।

ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সিআইডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাতে কোন কাগজপত্র আদালত থেকে এখনো এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ আসলে তদন্ত কাজ শুরু করা হবে।

 

×