রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা নিরাপদ
রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমম্বিত পদক্ষেপ দরকার। এ জন্য বিশেষ নক্সা তৈরির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন ও সতর্ক করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত এক কর্মশালায় এমন মত ব্যক্ত করা হয়। ডিএনসিসি মিলনায়তনে ‘নিরাপদে স্কুলে প্রবেশ’ বিষয়ক কাঠামোগত নক্সা প্রণয়ন শেখার কর্মশালায় প্রকৌশলীদেরও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস্ট ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি প্রোগ্রামের অধীনে ডব্লিউআরআই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জে মো. মঈনউদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিআইজিআরএস-এর ইনিশিয়েটিভ কো-অর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক-ঢাকা উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ ও ভাইটাল স্ট্রাটেজিস কারিগরি পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, আমরা সবার জন্য শহরকে নিরাপদ করতে চাই। এজন্য সড়ক ও ফুটপাথ নিরাপদ করা জরুরি। ডিএনসিসি সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে সড়ক ও ফুটপাথ নিরাপদ করার লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখবে। তিনি প্রশিক্ষণের সাফল্য কামনা করেন ও প্রশিক্ষণার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ তার বক্তব্য শেষ করেন।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২১ সালে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস্ট ফর গ্লোবাল রোড সেফটি শীর্ষক বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এ কর্মসূচির উদ্যোগে ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও কারিগরি সহায়তায় ঢাকার বনানী বিদ্যানিকেতন সংলগ্ন সড়ককে পথচারী ও শিশুবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপার এবং ব্যবহার করার লক্ষ্যে কার্যক্রম বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।
বিআইজিআরএসের ইনিশিয়েটিভ কো-অর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এ কর্মসূচির অন্যতম অংশীদার ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট ফুটপাথ ডিজাইন ও নগর পরিকল্পনা বিষয়ে আন্তর্জাতিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য সব বয়সী শিক্ষার্থীদের নিরাপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত নিশ্চিতকরণের জন্য অবকাঠামোগত নক্সা প্রণয়নে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ করে গড়ে তোলা।
কর্মশালার প্রথম সেশনে ডব্লিউআরআই’র সহকারী পরামর্শক এরিনা তাহনীম ঢাকার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ যাতায়াতের অন্তরায়ের বিষয় তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেন স্থপতি ও নগর নক্সাবিদ মুসতাসিম মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর যাতায়াতের পরিবর্তে গণপরিবহনে নিরাপদে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট স্থানে ওঠা-নামার ব্যবস্থা ও গাড়ি থামানোর জায়গা রাখা যেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের গেট পর্যন্ত নিরাপদে হেঁটে পৌঁছানোর অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
লেকচার পর্বের নক্সা প্রণয়ন সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধে নক্সা প্রণয়নের নিয়মাবলী, সমাধান প্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ডব্লিউআরআই’র টেকসই শহর কর্মসূচির পরামর্শক স্থপতি ফারজানা ইসলাম তমা। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়। কিন্তু নিরাপদ নক্সা প্রণয়নের মাধ্যমে যে এসব দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানা জরুরি। এ কর্মশালায় নিরাপদ নক্সা প্রণয়নের মাধ্যমে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া অংশগ্রহণকারীদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনব অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নগরের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে নিরাপদ এলাকার আওতাভুক্ত করতে পারে।
উলেখ্য এতে হাতেকলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ সেশনে অংশগ্রহণকারীদের বাস্তব সমস্যার সমাধানসহ ৩টি এলাকার নক্সা প্রণয়ন করা হয়। মোট ৪৮ অংশগ্রহণকারী ৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসব নক্সার প্রণয়ন সংক্রান্ত চর্চায় অংশ নেয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩৭ প্রকৌশলী অংশগ্রহণ করেন -যারা ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন, নির্মাণ ও বাস্তবায়ন কাজের সঙ্গে জড়িত। কর্মশালায় ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর ট্রাফিক বিভাগের ৬ কর্মকর্তা ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) থেকে ৫ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় দলগত নক্সা প্রণয়ন চর্চা পরিচালনায় সহায়তা করেন ডব্লিউআরআই’র সহকারী পরামর্শক এরিনা তাহনীম, বিআইজিআরএস-এর ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর রেজাউর রহমান। কর্মশালায় বিআইজিআরএসের এনফোর্সমেন্ট কো- অর্ডিনেটর মো. গোলাম হোসেন, সার্ভিলেন্স কো-অর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলীম, ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।