সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ।
প্রশাসনকে না জানিয়েই ২২ জন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে। নিয়োগ বাণিজ্য আড়ালের জন্য এমন অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ টি পদে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে নতুন পরিচালনা কমিটি। এর মধ্যে কলেজ শাখায় প্রভাষক পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ১ জন, আইসিটি বিষয়ে ১ জন ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ে ১ জন। আর স্কুল শাখায় বাংলা, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান (পদার্থ ও রসায়ন), আইসিটি, ইংরেজি ও সাধারণ শিক্ষক পদে ৩ জন করে এবং শারীরিক শিক্ষক পদে ১ জন। এসব পদের বিপরীতে মোট ২৪৭ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ও শনিবার স্কুল ক্যাম্পাসে ওই পরীক্ষা নেয়া হয়। এই দুইদিন পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান। তার সহযোগী হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের আরও ৮ জন শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এই পরীক্ষা বা নিয়োগ বিষয়ে ডিসির প্রতিনিধি তথা স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা অফিসের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগ রয়েছে এই নিয়োগে মোটা অংকের বাণিজ্য করা হয়েছে। তাই স্থানীয় কোন কর্তৃপক্ষকেই বিষয়টি জানানো হয়নি। ২২ টি পদে প্রায় ২৬০ জন প্রার্থী ৮ শত টাকা ব্যাংক ড্রাফের মাধ্যমে আবেদন করেছিল। অথচ পরীক্ষার সুযোগ পায় মাত্র ২৪৭ জন। এতেই হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। আর সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথেও মোটা অংকের টাকা নেয়ার চুক্তি হয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, লায়ন্স স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা নেয়া বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাদের অগোচরেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তবে নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়ে থাকলে তা সুনির্দিষ্ট প্রমান পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একইভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, জানিনা কিভাবে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে অবগত না করেই এত বড় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিয়োগ বাণিজ্য বা পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকলে তা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পরীক্ষক নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাকে নিমন্ত্রণ করায় এসেছি এবং পরীক্ষা নিয়েছি। কঠোর নিয়মে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। এটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে ডিজি, ডিসি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার বাধ্য বাধকতা বিষয়ে আমার জানা নাই।
উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিয়ার রহমান শুধু কতজন পরীক্ষা দিচ্ছেন এই তথ্য দেন। কিন্তু মোট আবেদনকারীর সংখ্যা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর নিয়োগ পরীক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কেউ নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রয়োজন নাই। কারণ এখানে এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক নেয়া হচ্ছেনা।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে কাউকেই না জানিয়ে নিজেদের পছন্দমত লোককে নিয়োগ দিতে পারি। তবুও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ ৮ জন শিক্ষককে দিয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অশোভন আচরণ করে বলেন, আপনাদের কি করার আছে করেন। আমি দেখে নিবো। এতে সংবাদ কর্মীরা প্রতিবাদ জানালে তিনি মেনন নামে কমিটির একজন সদস্যের মাধ্যমে উপঢৌকন দিয়ে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা চালান।
নুসরাত