জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট এলাকায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস সেনাসদস্যের স্ত্রী শাহিনা আক্তারকে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার তদন্তে পাওয়া সন্দেহভাজন পলাতক আসামি মো. রাসেল খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪। র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুরের একটি অভিযানিক দল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এ অভিযান পরিচালনা করে। র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ভিকটিম শাহিনা আক্তারের (৩৮) স্বামী মো. আব্দুল সালাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার কারণে এবং তার দুই সন্তান এলাকার বাইরে লেখাপড়া করার সুবাদে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট গ্রামের বাড়িতে একাই বসবাস করেন গৃহবধূ শাহিনা আক্তার। ঘটনার দিন ১০ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গৃহবধূ শাহিনা আক্তার তার ভাইয়ের স্ত্রী লিমা আক্তারসহ তার পরিবারের লোকজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে শাহিনা আক্তারের প্রতিবেশী শেফালী গৌর এবং তার স্বামী রুপু গৌর ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। একতলা ভবনের বসত ঘরের পশ্চিম পাশের কক্ষে গিয়ে গৃহবধূ শাহিনা আক্তারের চোখ ও দুই হাত সাদা কাপড়ে বাঁধা, মুখে সাদা জর্জেট কাপড়ের ওড়না গোঁজা, দুই হাটু কাঁঠালি রঙের কাপড় দ্বারা বাঁধা এবং অর্ধনগ্ম অবস্থায় দেখতে পান। তাদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশী লোকজন সেখানে গিয়ে মেলান্দহ থানা পুলিশ এবং গৃহবধূর ভাই মনজুরুল ইসলামকে সংবাদ দেন।
মেলান্দহ থানা পুলিশ এবং ময়মনসিংহের সিআইডির একটি ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত গৃহবধূর মরদেহ ও ঘটনাস্থালের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। একই সাথে তার মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
র্যাবের জামালপুর ক্যাম্পের মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা দস্যুতা করার উদ্দেশ্যে ১০ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার মধ্যে যেকোন সময় শাহিনা আক্তারের বসত ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে নগদ টাকা ও গয়নাসহ আট লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মো. মনজুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০২০) এর ৯(২) ও ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ৩৯৪ ধারায় ১৩ সেপ্টেম্বর মেলান্দহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৮/১৭৬। ঘটনার পর থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা গ্রেপ্তার এড়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
সেনাসদস্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ, হত্যা ও লুটপাটের ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই মামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামিদের ধরতে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ছায়া তদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানার পর থেকেই বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের একটি বিশেষ আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জামালপুর জেলা সদর উপজেলার পলিশা এলাকা থেকে ওই ঘটনার সন্দেহভাজন পলাতক আসামি মো. রাসেল খানকে (২৭) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
গ্রেপ্তার রাসেল খান জেলার মেলান্দহ উপজেলার সুলতানখালি গ্রামের মো. বাবুল খানের ছেলে। তাকে মেলান্দহ থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লে করা হয়, র্যাব তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্র, অপহরণ, হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
যা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে ইতোমধ্যেই বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। র্যাব-১৪ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যার মত জঘন্য অপরাধ কর্মকাণ্ড দমনের লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।