বিআরটি-৩ প্রকল্পটি সংশোধন
বিআরটি-৩ (গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং বাস অপারেশনের বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আবারও ব্যবসায়ীরা প্রকল্পটির নকশায় ত্রুটির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, দ্রুত সংশোধন করে এটি যোগাযোগবান্ধব করতে হবে। একই সঙ্গে হাইওয়ে থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা তুলে দেওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমির হোসেন নূরানী।
তিনি ওই সভায় এফবিসিসিআইয়ের হয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসকসহ প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। আমির হোসেন নূরানী বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি দিয়েছি। কিন্তু এর সুবিধা পাওয়া নিয়ে অশনি সংকেত তৈরি হয়েছে। যানজটে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে।
নিত্যদিনের দীর্ঘ যানজট, ১০০ ফিটের জায়গায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে এসে ইউটার্ন নেওয়া, সড়কে যত্রতত্র অটোরিক্সা চালানোর ফলে স্বাভাবিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। বিআরটি-প্রকল্পের ফলে ব্যবসায়ীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত এই প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে যুগোপযোগী এবং ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। অন্যথায় এই প্রকল্প থেকে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতে পারবেন না। তিনি জানান, এই প্রকল্প কতদিনে চালু হবে, কিভাবে মনিটরিং হবে, কিভাবে পরিবহন সেক্টরে সংস্কার হবে তার কোনো কিছুই কর্তৃপক্ষ স্পষ্টীকরণ করতে পারেনি।
বরং পুরো প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য বিআরটি প্রকল্প না, এই প্রকল্পের জন্য ব্যবসায়ীরা সেটিও এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, এই প্রকল্পের জন্যই ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ীদের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
এই প্রকল্পের আশপাশেই দেশের বৃহৎ শিল্পাঞ্চল, আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। তাই জনস্বার্থে এই প্রকল্পের নকশা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। সভায় আলোচকরা আরও জানান, বিআরটির বাস নির্বিঘেœ চললেও নিচে যানজট বাড়বে, জলাবদ্ধতা দেখা দেবে, পথচারীদের হাঁটার ফুটপাত সংকুচিত হওয়ায় তারা সড়কে চলতে বাধ্য হবে, এতে দেখা দেবে দুর্ঘটনার শঙ্কা। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটিও হয়নি। কতদিনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না। যদিও প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে-গাজীপুর-টঙ্গী-উত্তরা-বিমানবন্দর করিডরে ২০ কিলোমিটার বিআরটি লাইন নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষ, ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, আধুনিক, টেকসই এবং নিরাপদ নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।