ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার 

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনে বাধা

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৭ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনে বাধা

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

  • দলিল লেখক সমিতির গ্রম্নপিং দ্বন্দ্বে এই অচলবস্থা
  • ন্যায়ের পক্ষে সভাপতি বিপক্ষে সম্পাদক


চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনে দলিল লেখক সমিতিরি গ্রুপিংয়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষ ও সরকার। দলিল নিবন্ধন কার্যক্রমের এই দ্বন্দ্ব ইস্যুতে তলানিতে পৌছেছে সরকারের রাজস্ব আয়। মূলত নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়মান্ত্রিক উপায়ে দলিল নিবন্ধন করার জন্য সাব রেজিস্ট্রারকে চাপ প্রয়োগ করায় তিনি রয়েছেন মহা বিপাকে। এমনকি সভাপতি ও সম্পাদক বিপরীত মেরুতে অবস্থান করায় এই অচলবস্থা  নেপথ্যের মূল কারণ। 
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নিয়মতান্ত্রিকের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে সম্পাদক ও তার লাঠিয়াল বাহিনী। ভাড়াটিয়া নামসর্বস্ব দলিল লেখকদের সঙ্গে জোটবেঁধে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সম্পাদক গংরা বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সাব রেজিস্ট্রার রয়েছেন মহা আতঙ্কে। সুস্থ কর্ম-পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমার শরণাপন্ন হলেও গত কয়েকদিন গড়ালেও এর সূরাহ হয়নি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। 
তবে  সোমবার রাতে জেলা রেজিস্ট্রার দাবি করেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তবে, এই বিরোধ থেকে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে সাব রেজিস্ট্রার, অফিস স্টাফ থেকে সাধারন দলিল লেখক সবাইর মধ্যে এক ধরণের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরো সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিস থমথমে, যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বলেন, খবরটি আপনার কাছে পৌছে গেছে। বৃহস্পতিবার অচলবস্থার নিরসন হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই দলিল নিবন্ধন হচ্ছে। আশা করি, সরকারের ওই অফিস থেকে যে রাজস্ব আহরণ হয় সেটি স্বাভাবিক থাকবে। অথচ সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কথা বলে পুরো ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, এই সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারী সাইফুল্লাহ কামালের নেতৃত্বে কতিপয় দলিল লেখক ভূমি আইন অমান্য করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে নিয়ম-বর্হিভূতভাবে দলিল করতে না পারায় উল্টো সাব রেজিস্ট্রার ঘুষ খায় এই ধূয়া তুলে দলিল লেখকদের জোড় করে কলম বিরতি পালনে বাধ্য করছে। ফলে সরকার প্রতি নিয়ত মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম এডভোকেট ক্লার্ক এসোসিয়েশনের একজন আইনজীবীর সহকারী মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন দুবৃর্ত্তায়নকারীদের বিরুদ্ধে। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে ১৭জনকে আসামী করে। উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক সাইফুলস্নাহ কামাল, দলিল লেখক রফিক, হারুণ ও বেলাল গং। বর্তমানে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশের নিষ্কিয়তায় আসামীরা বীরদর্পে ঘূরে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান মামলার বাদী।

ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মোসাদ্দেকুল মাওলা বলেন, আমরা জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। কিন্তু দলিল লেখক সমিতির মধ্যে কিছু দাবিদায়া নিয়ে আন্দোলন চলায় তারা আমাদের সেখানে প্রবেশে বাধা দেয়। দলিরটির সঙ্গে ২৬জন দাতা ছিলেন এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বয়স্ক ও বিদেশগামী। দু’দিন গিয়ে ফেরত আসি। তারা আমাদের জানায়, আমরা দলিল করছি না, আপনাদেরও করতে দিব না। পরে সাব রেজিস্ট্রার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর আমাদের তার অফিস কড়্গে দলিল দাখিল করতে বলেন, এতেই ড়্গপ্তি হয়ে দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক পড়্গ আমাদের উপরে অতর্কিত হামলা চালায়। দলিলটি না করেই ফিরে আসি। এতে সরকারের রাজস্ব ড়্গতি হয়েছে গত একমাসে কয়েক লাখ টাকা। এই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করি যেটি চলমান। তবে সমিতির সম্পাদক বলেছেন, বিরোধটি মিমাংসা হয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, না, মিমাংসা হয়নি, ওনারা মিথ্যা বলছেন। 

অভিযোগে বাদী উলেস্নখ করেন, সীতাকুন্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কথিত অনিবন্ধিত ভূঁইফোড় দলিল লেখক সমিতি নামাকরণে নামধারী সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। কতিপয় দলিল লেখক দ্বারা অনৈতিক ও আইন বর্হিভূতভাবে বলপূর্বক সেবা প্রত্যাশীদের দলিল রেজিস্ট্রেশনের কাজে বাধা প্রদান, হুমকি-ধমকি ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে। অথচ ভূঁইফোঁড় এসব দলিল লেখকদের সনদের বয়স এক বছর হয়নি। 

এই গংরা সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য নিবন্ধন বিহীন অবৈধ সমিতিকে প্রতি দলিলে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করছে। এ অনৈতিক দাবি থেকেই মূলত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। 
একই সঙ্গে  কেউ দলিল করিতে চাইলে দলিলের মুসাবিধা যে কোন দলিল লিখনের মাধ্যমে মুসাবিধা করিয়া দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়। তাদের কথায় না চললে পুরো রেজিস্ট্রি অফিস অচল করে দিবেন বলেও হুমকির কথা অভিযোগে উলেস্নখ করা হয়েছে। 

সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতিরি সাধারন সম্পাদক সাইফুলস্নাহ কামাল বলেন, আমাদের সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধন করার ড়্গেেত্র কিছু দাবিদায়া ছিল। সেটা মিটমাট হয়ে গেছে। আমরা লিখিত অভিযোগ বা আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। রবিবার থেকে কার্যক্রম চলছে। বলেন, আমিসহ ১৭জনের বিরম্নদ্ধে একটা মামলা হয়েছে; সেটি চলমান। 
সংশিস্নষ্টরা বলছেন, জমির দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রমকে গতিশীল ও সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে সরকারি কাজে বাধাদানকারী এই সব দুষ্কৃতিকারী নামধারী দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদাবাজদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে শা¯িত্ম নিশ্চিত করা জরম্নরি। পাশাপাশি তাদের দলিল লেখার সনদ বাতিল ও সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা অতি জরম্নরি বলে জানায় সাধারণ ভুক্তভোগী। অন্যথায় সরকারী রাজস্ব বাধাগ্র¯ত্মসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটনার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। 

জানতে চাইলে সীতাকুন্ডের সাব রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব বলেন, এই অফিসে দলিল লেখকদের মধ্যে অভ্যšত্মরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। এক পড়্গ বলে তাদের নিয়মনুযায়ী দলিল করতে হবে। অপর পক্ষ বলে, আমরা যেভাবেই দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিল দাখিল করব সেভাবেই নিবন্ধন করতে হবে। এ নিয়মের ব্যত্যয় হলে দলিল নিবন্ধন করতে আপনি পারবেন না। দু’পক্ষরে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পরও গত রবিবার থেকে সীমিতভাবে দলিল দাখিল হয়েছে। এই দ্বন্দ্বের কারণে বিগত দিনগুলোতে দলিল নিবন্ধন বন্ধ থাকায় প্রায় দুইশ দলিল রেজিস্ট্রি করা যায়নি। এতে সরকারর মোটা অংকের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এটা হয়েছে দলিল লেখকদের অনৈতিক দাবির কারণে, যোগ করেন এই কর্মকর্তা। 

চট্টগ্রাম অঞ্চলের আইআরও (নিবন্ধন পরিদর্শক) জিয়াউল হক সাংবাদিকদের বলেন, সীতাকুন্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকদের মধ্যে একটা বিরোধ হয়েছে, যেটি আমরা অবগত হয়েছি। এ সংক্রান্ত অভিযোগ নামা ঢাকায় এসেছে। আমরা চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নিদের্শনা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনুযায়ী দোষীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বপ্না

×