সিসিটিভি ফুটেজ। সংগৃহীত
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) টেন্ডার নিয়ে বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে তুলকালাম কা- ঘটেছে। জেলা বিএনপি সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু’র নেতৃত্বে বিএনপি কর্মীরা এসময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের অফিসকক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজও ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত এ.কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু ‘এ.কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য।যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবর মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) জন্য ৬টি গ্রুপে প্রায় ৫ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই টেন্ডারে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে জেলা বিএনপির সদস্য এ.কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু’র পছন্দের প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়। ছোটলু’র পছন্দের প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সবগুলো পাননি।
বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের তিনি তত্ত্ববধায়ককে লাঞ্ছিতের নির্দেশ দেন। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা ও উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলে তার কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ। তিনি প্রবেশ করেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন। এর মধ্যেই ছোটলুর নেতৃত্বে আরো ৭- ৮ জন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করেন।
সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ছোটলু হাবিবুল্লাহকে তত্ত্বাবধায়কের চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মতো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে গেলে তত্বাবধায়কও হাবিবুল্লা’র জামার কলার ধরে আত্মরক্ষা করেন। এ সময় দুজনের মধ্যে ভিতর কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের অন্য স্টাফরা এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বলেন, ‘ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যান। এ সময় বিএনপি নেতা ছোটলু সাহেবের নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দু’জন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে তারা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছোটলু সাহেব সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক। সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। তিনি সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেন। সব ক’টি না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরবর্তীতে তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমার চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে। তখন আমিও আমার সম্মান রক্ষার্থে সেই ছেলেটিকে আটকাতে চেষ্টা করি। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি পরবর্তীতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিবেন; সেটা গ্রহণ করা হবে।
তবে ফোনে হাসপাতালের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা এ.কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু বলেন, ‘তিনি র্যালিতে রয়েছেন। হাসপাতালে কি ঘটেছে, না ঘটেছে এখন বলা যাচ্ছে না।’ এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা আছে; তবে হাসপাতালে কোন টেন্ডার জমা দেইনি। তার কাছে আমার একটি কাজ ছিলো তাই গিয়েছিলাম। হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তার কোন ঝামেলা থাকতে পারে। তাই তাদের দুজনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি বিষয়টি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।’
রিয়াদ