রামগঞ্জ-চাটখিল রাস্তার হোইলা কুয়ার ব্রিজ সংলগ্ন দুধ মিয়া হাজী বাড়ির সামনে বিরেন্ধ খালের ওপর ব্রিজ
রামগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৮ সদস্যের তিনটি পরিবারের জন্য ১টি, ৪ সদস্যের ২টি পরিবারের ১টি ও ৬ পরিবারের জন্য ১টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু তিনটি নির্মাণে প্রায় ২ কোটি ব্যয় করা হয়। নির্মাণাধীন সেতুগুলো হলো, দরবেশপুর ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের রামগঞ্জ-চাটখিল রাস্তার হোইলা কুয়ার ব্রিজ সংলগ্ন দুধ মিয়া হাজী বাড়ির সামনে বিরেন্ধ খালের ওপর, বালুয়া চৌমুহনী সমিতির বাজার রাস্তার নোয়াবাড়ির সামনে জকশিন খালের ওপর ও একই খালের ওপর পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের সামনে।
২০২০ ও ২০২৩ সালে সেতু ৩টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান রেখে দরবেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে সংশ্লিষ্ট অফিসকে ম্যানেজ করে এসব সেতু বরাদ্দ পাইয়ে দেয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব সেতু নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন তারা। এ ছাড়াও উপকারভোগী পরিবার থেকে সেতু দিয়ে চলাচলে জনগণকে বাধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ২০২১-২২ অর্থবছরের পাকা সেতু, কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দুধ মিয়া হাজী বাড়ির সামনে বিরেন্ধ খালের ওপর ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ও নোয়া বাড়ির সামনে জকসিন খালের ওপর ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সেতু ২টি বরাদ্দ হয়। সেতু ২টির কাজ পায় মেসার্স লামিয়া ট্রেডার্স ও মেসার্স নাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এবং পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের সামনে জকসিন খালের ওপর সেতুটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ লাখ ৪১ হাজার ৪শ ৩৬ টাকা। এ কাজটি পায় মেসার্স মিজানুর রহমান নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুধ মিয়া হাজী বাড়ির সামনে বিরেন্ধ খালে নির্মিত সেতুটির ওপর রহিমা বেগম নামে একজন মহিলা ধান শুকাচ্ছেন, সেতুর দুইপাশের সংযোগ রাস্তা ভেঙে গেছে। ঘাস, বনজ গাছগাছালিতে ঝোপঝাড়ে ভরা, সেতুতে ওঠার পথে ১টি টিউবঅয়েল, অপরপাশে একটি বাড়ি, ওই বাড়িতে তিনটি পরিবার বসবাস করছেন। আশপাশে কোনো বাড়িঘর, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির এ জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দেখা যায়নি, সংযোগ রাস্তাও নেই। সেতুটির বিষয়ে জানতে চাইলে দুধ মিয়া হাজী বাড়ির রহিমা বেগম (৪৮) বলেন, আমরা বর্তমানে এ বাড়িতে ৮ জন লোক বসবাস করছি, আমার দেবর খুব কষ্ট করে ব্রিজটি পাস করে এনেছেন।
২০২৩ সালে ঠিকাদার ব্রিজটির কাজ শেষ করে চলে যায়। দুইপাশের রাস্তা ঠিকমতো পাকা করেনি। এখন ভেঙে গিয়ে চলাচলে কষ্ট হয়। এ সময় স্থানীয় আব্দুর রহিম নামে একজন বলেন, সেতুটি পার্শ^বর্তী আরেকটি স্থানে বরাদ্দ হয়ে সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছিল, পরে মিজান চেয়ারম্যান আর্থিক সুবিধা নিয়ে ৩টি পরিবারের জন্য সেতুটি স্থানান্তর করে দেয়। জনস্বার্থে সেতুটি কোনো উপকারে আসবে না। তাই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখে, তিনটি পরিবারের স্বার্থে সেতু নির্মাণ করে সরকারের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি আমরা এলাকাবাসী।
নোয়াবাড়ির সামনে জকসিন খালের ওপর নির্মিত সেতুটি গিয়ে দেখা যায়, আবুল হোসেন মাস্টারের বাড়ি ছাড়া কোনো সংযোগ রাস্তা ও প্রতিষ্ঠান নেই। আবুল হোসেন মাস্টার বলেন, আমরা ছয় ভাই এ বাড়িতে বসবাস করি। সাঁকো দিয়ে আসা-যাওয়ায় কষ্টের কারণে আমার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন লাখ টাকার বেশি খরচ করে সেতুটি বরাদ্দ করেছে। এক বছর আগে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এখনই সেতুর দুইপাশ নষ্ট হয়ে গেছে। একই খালের পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের সামনে নির্মিত সেতুটিতে গিয়ে দেখা যায়, মামুন মাস্টারের বাড়িতে যাওয়া- আসার একটি সংযোগ রাস্তা রয়েছে। ওই বাড়িতে দুইটি পরিবার বসবাস করেন।
এ সময় পাশর্^বর্তী বাড়ির আলী আহম্মদ বলেন, সেতুটি যদি আরও ১শ গজ সরিয়ে করা হতো, তাহলে এলাকার জনগণ উপকৃত হতো। এখন এলাকাবাসীর যাতায়াতে মামুন মাস্টারদের জায়গা ব্যবহার করতে হয়। এতে তারা বিভিন্ন সময় যাওয়া-আসায় বাধা দিচ্ছেন। জনস্বার্থে সেতুর সঙ্গে সংযোগ রাস্তা জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্য বলেন, গ্রামে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সেতুর অভাবে হাজারো মানুষ কষ্ট করছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ মানুষ যাতায়াত করছেন। চেয়ারম্যান অনৈতিকভাবে অর্থকড়ি নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু বরাদ্দ বাদ দিয়ে, ব্যক্তিস্বার্থে বরাদ্দ পেতে সহযোগিতা করে। সরকারের বরাদ্দের টাকায় জনস্বার্থে সেতু তিনটি নির্মিত হলে অনেক মানুষ উপকৃত হতো। কয়েকটি পরিবারের জন্য সেতু নির্মাণ করে সরকারের এত টাকা নষ্ট করা খুবই দুঃখজনক। দরবেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের ৫ আগস্টের পর থেকে পরিষদের ও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দিলীপ দে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকটি সেতু তারা ঢাকা থেকে বরাদ্দ নিয়ে আসছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, সরকারি সেতু করতে হবে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে। একটি বাড়ির অথবা কয়েকটি পরিবারের জন্য সরকারি সেতু নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। কোথাও যদি এভাবে করা হয়ে থাকে এবং জনগণের চলাচলে বাধার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।