ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

১৩ বছর পর পেলেন পরিবারের খোঁজ!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০০:০৯, ৭ নভেম্বর ২০২৪

১৩ বছর পর পেলেন  পরিবারের খোঁজ!

জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে ভারতের কলকাতায় আছেন ২০১২ সালে ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া শিরিন। সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। সেখানে থিতু হলেও পরিবার হারানোর শূন্যতা কখনো কাটেনি।

 শিরিন জানান, তার এটুকু মনে ছিল যে তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর। বাড়ির পাশেই বসতো গরুর হাট। তারপর একটা কবরস্থান আর ঈদগাহ। বাড়ির আশপাশে ছিল একটি মাজার। সেখানে কাটানো মুহূর্তগুলো ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়তো তার। কিন্তু কাউকে সেই কথা বলার সুযোগ ছিল না। বাবা মায়ের নামও ভুলে গিয়েছিলেন। তবে এটুকু মনে ছিল যে, মা করতেন দাইয়ের কাজ, আর বাবা চালাতেন রিকশা।

দীর্ঘ এই সময়ে কারো সাথে যোগাযোগেরও কোনো সূত্র পাননি শিরিন। হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে ঢাকার এক বাসায় আমি কাজ করতাম। মা বাবা থাকতো গ্রামে। এক সময় আমার মা আমাকে দেখতে আসে। পরে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সেই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এরপর ঘুরতে ঘুরতে কোথায় যেন চলে গেলাম! কিছুই মনে করতে পারিনি। সব কিছু কেমন যেন মাথা থেকে হারিয়ে যায়। আর ফেরা হয়নি পরিবারে, কারণ মনেই করতে পারিনি।’
 
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর তাকে বিভিন্ন সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেন তার মা আনোয়ারা বেগম ও পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোথাও পাননি।
মাস ছয়েক আগে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিরিন। কিন্তু তার কাছে স্পষ্টভাবে কিছুই বলতে পারছিলেন না। শুধু তার মনে থাকা কিছু গল্প ছাড়া। বাবার নামও বলেছিলেন ভুল।
এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে তারা খুঁজতে থাকেন শিরিনের পরিবারকে। তার বর্ণনা অনুযায়ী গ্রাম শনাক্ত করতে পারলেও নির্দিষ্টভাবে খোঁজ বাবা মার পরিচয় মিলছিলো না।
একপর্যায়ে উপজেলার সংবাদকর্মী মো. নাছির উদ্দিন তার নিজস্ব পেজ থেকে ১৩ বছর আগের একটি ছবি দিয়ে শিরিনের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পোস্ট করেন। মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়। এই পোস্টের জেরেই অবশেষে জানা যায় তার বাবামা রূপসদী গ্রামের হিরন মিয়া ও আনোয়ারা বেগম।
এরপর বাবা মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন শিরিন। এমন খবরে তাদের বাড়িতে ভিড় জমায় এলাকাবাসী। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়।

স্থানীয়রা জানান, শিরিনকে ফিরে পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত তারা। কখনো ভাবেননি শিরিন বেঁচে আছেন।পরিবারের খোঁজ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে জীবনের নতুন অধ্যায়ের কথা বলছিলেন শিরিন। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি কলকাতাতে আছি, জীবনের মানেটা এতদিন পর খুঁজে পেয়েছি। কত দিনের সাধনা ছিল বাবা মায়ের মুখটা একটু দেখবো। চাতক পাখির মতো আশায় ছিলাম। আমার সেই আশা পূরণ হয়েছে। মৃত্যুর আগে এটাই আমার বড় পাওয়া।
 
ভারতে গেলেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কীভাবে যে আমার এই কয়টা বছর কেটেছে, তা একমাত্র আল্লাহ জানে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। তবে সবার সহযোগিতায় আমি আমার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। আমি সত্যিই অনেক খুশি। আমার আর চাওয়ার কিছু নেই।’ খুব শিগগিরই দেশে আসবেন জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

 

তাবিব

×