ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

সাত কলেজের চলমান আন্দোলন স্থগিত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০২৪

সাত কলেজের চলমান আন্দোলন স্থগিত

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত

শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে আশ্বাসের পরও কার্যকর সমাধান না পেলে ফের রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেলে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সমন্বয়ক মো. নাঈম হাওলাদার।
এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলনে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সংকট ও সমস্যার চিত্র তুলে ধরি। সমস্যা সমাধানে আমরা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দিয়েছি।

একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা দেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করতে দেখা যায় তাদের। সবশেষ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে আলোচনা শুরু করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথমবারের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকারীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নেন। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও ধারাবাহিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
তিবলেন, গত ৩১ অক্টোবর প্রথমবারের মতো শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। এ সভায় দুই উপদেষ্টা দাবি সম্পর্কে জানার পর সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরে পৃথক প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করায় ওই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।
সবশেষ বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। এ সভায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ‘উপযুক্ত সমাধানের’ আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
নাঈম হাওলাদার বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করবেন। তবে অধিভুক্তি বাতিল হলেও সাত কলেজকে ফের পেছনে ফেরানো হবে না। বরং সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করা হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এ পরিচয় তৈরি করা সম্ভব, সেটা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ও একটি বিশেষজ্ঞ টিম নির্ধারণ করবে। এজন্য তিনি আমাদের থেকে সময় চেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাস পরিদর্শন শুরু করবেন।

মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার বিষয়েও তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। শুধু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাই অধিভুক্তি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেননি। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও অধিভুক্তি বাতিলের জন্য কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। দুইপক্ষের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় শিক্ষা উপদেষ্টা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে সন্তুষ্ট। তাই আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এখন থেকে সাত কলেজের দাবি নিয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা শুরু থেকে রাস্তা অবরোধ কিংবা বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক পদ্ধতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমরা কোনো ধরনের আশ্বাস না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করেছি। এখন আমাদের মনে হয়েছে, উপদেষ্টার আশ্বাসের পর আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। আলোচনার দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় করতে পারব।
এ সময়ের মধ্যে সাত কলেজের স্বাভাবিক ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলবে। শুধু তাই নয়, সাত কলেজের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি হওয়া ও পরিচালনা কর্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ করা এবং সনদ প্রদান করার মতো নিয়মিত কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের পরিচয় সংকট তৈরি না হয়। আর এ সময়ের মধ্যে যদি ফলাফল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে বিশেষ ব্যবস্থায় খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ও যেন এ বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রাখে, সে দাবি আমরা জানাচ্ছি।
পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে নাঈম হাওলাদার বলেন, আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করলেও স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত মানে এই নয় যে আমরা আন্দোলন থেকে একেবারে সরে এসেছি। উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের থেকে সময় চেয়েছেন। তাঁর সম্মানে এবং দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে উপদেষ্টা মহোদয়ের আশ্বাসের পরও যদি আমরা কোনো কার্যকর সমাধান না পাই বা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি নতুন কোনো ধরনের ভিন্ন কোনো প্রহসন শুরু হয়, তাহলে আমরা আবার রাজপথে নেমে আসব। রাজপথেই তখন উদ্ভূত পরিস্থিতির ফয়সালা হবে।

×