জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও জনসাধারণ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করে আসছে। ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ডাক্তারের দায়ের করা মামলার আসামি হয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পৌর শহরের চরকাউরিয়া গ্রাম। হয়রানি বন্ধ ও ডাক্তারের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পুরুষশূন্য গ্রামের নারীরা।
ডাক্তার-কর্মচারীরাও কর্মবিরতীসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আসছে। জানা যায়, গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২৮ অক্টোবর বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান পৌর শহরের চরকাউরিয়া গ্রামের হতদরিদ্র রিকশাচালক রজব আলী (৩২)। এরপর শোকাহত রজব আলীর পরিবারের লোকজনের সাথে কর্তব্যরত ডাক্তার আসাম লাবনীর বাকবিতন্ডা হয়।
একপর্যায়ে ধস্তাধ্বস্তির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরই পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা ত্রিপাক্ষিক আলোচনা করে রজব আলীর লাশ হস্তান্তর করে পরিবারের কাছে। ত্রিপাক্ষিক আলোচনা শেষে হাসপাতালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এ ঘটনার জের ধরে ২৯ অক্টোবর কর্মবিরতীর ঘোষনা দিয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ডাক্তার ও কর্মচারীরা। হাসপাতালে মৃত রোগির পরিবারের সদস্য, সাবেক একজন কাউন্সিলর ও তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আজিজুল হক। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মামলাটির তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন আসামি জামিনে রয়েছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন এজাহার নামীয় অন্যান্য আসামিরা। মামলার পরই পুলিশ চরকাউরিয়া গ্রামে সাড়াশি অভিযান চালায়।
ফলে পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে চরকাউরিয়া গ্রাম। অনেক বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে চরকাউরিয়া গ্রামের নারীরা পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৫ নভেম্বর গণমিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সরকার রাসেল। অন্যদিকে ২৯ অক্টোবর থেকেই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে আসছেন বকশীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাক্তার ও কর্মচারীরা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক।
এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার বিঘ্ন ঘটছে। বিব্রতকর অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন। হাসপাতালে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় সাংবাদিকদেরও প্রতিও ক্ষুব্ধ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক। এ কারণে তিনজন সাংবাদিককেও আসামি করেছেন ওই মামলায়।
ডাক্তার মোহাম্মদ আজিজুল হক প্রকাশ্য সমাবেশে মাইকযোগে বলেছেন, সাংবাদিকদের গাছের সাথে বেঁধে লাল থেরাপী দেওয়া হবে। তিনি সাংবাদিকদের বকশীগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণাসহ নানা অশালীন ও মানাহানিকর বক্তব্য দেন। সাংবাদিকদের নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।