কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা ইউনিয়নের চারিতুপায় ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুর নির্মাণ কাজ গত তিন বছওে ও শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনে ও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্ট্রাকশন এন্ড কোঃ লিমিটেড মেসার্স এম এ তাহের (জেবি) তিন বচ্ছর পূর্বে ৭৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর কাজটি শুরু করলেও তাদের অবহেলায় আজ ও এ কাজটি শেষ হয়নি। নৌকায় যাতায়াতে এলাকাবাসীর মালামাল পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া নৌকা দিয়ে পারাপারে শিশু, বয়স্ক মানুষ, প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে নদী পার হতে হয়। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় এক মা তার দেড় বছরের কন্যা শিশুকে নিয়ে নৌকায় নদী পার হতে গিয়ে শিশুটি পানিতে পড়ে যায়। পরে এলাকাবাসী পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ডাকাতিয়া নদীর মৌকারা ইউনিয়নের চারিতুপা গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ গত ৩০ বছর পূর্বে এলাকাবাসীর যাতায়াতে নিজেদের উদ্যোগে কখনো বাঁশের সাঁকো আবার কখনো কাঠের সেতু নির্মাণ করে যাতায়াত করতেন। এসেতু দিয়ে তারা নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করতেন।
অন্যদিকে এ সেতু দিয়ে চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নের মানুষ ও নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত করতেন। এছাড়া নাঙ্গলকোটের মৌকরা, রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এ সেতু পার হয়ে চৌদ্দগ্রামের পন্নারা গ্রাম ও দৌড়করা বাজার দিয়ে চিওড়া বিশ্বরোড হয়ে ঢাকা-চট্রগ্রামে সহজে যাতায়াত করতেন।
নদীতে নৌকা চালানো দু‘জন নৌকার মাঝি জসিম উদ্দিস জানান, প্রতিজন ১০টাকা করে এলাকাবাসীকে নৌকা দিয়ে পারাপার করেন। প্রতিদিন তাদের ১৮শ টাকা করে আয় হয়। নৌকা দিয়ে যাতায়াতকারী চারিতুপা গ্রামের রোকসানা ও কোহিনুর বেগম বলেন, নৌকা দিয়ে ছোট বাচ্চা এবং প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে যাতায়অতে এলাকাবাসীকে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
জানা যায়, দু‘উপজেলার সহজ যাতায়াতের জন্য নাঙ্গলকোট এলজিইডি গত তিন বছর পূর্বে ডাকাতিয়া নদীর উপর ৭৫ মিটার দীর্ঘ চারিতুপা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় গত তিন বছওে ও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে গত ৭ মাস থেকে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
চারিতুপা গ্রামের কৃষক শরীফ আহমেদ মজুমদার বলেন, গত তিন বছর পূর্বে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় সেতুর নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় নৌকা দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এলাকার অসুস্থ রোগী, শিশু ও প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া কোমলমতি শিশু, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পাশ্ববর্তী মোড়েশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌকারা দারুচ্ছুন্নাত নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ নাঙ্গলকোট হাছান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজে নৌকা দিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বর্তমানে সেতুর নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তারা জরুরী ভিত্তিতে সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক কে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুল ইসলাম সিকদার বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চুড়ান্তভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনাও দাখিল করতে বলা হয়েছে।