রাজশাহীর দুর্গাপুর ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজের ছত্রাকনাশক স্প্রে করে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করা ফুলকপি পচে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষকদের প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কৃষকরা। এ নিয়ে বুধবার জমিতেই মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এসময় একজন জমির ফসলের পচন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এই ঘটনায় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনার দায় নিতে নারাজ ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজের (পেস্টিসাইড) রাজশাহী অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অভিযোগ পেয়ে ইউএনও সাবরিনা শারমিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনীকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে এর আগেই ওই ছত্রাকনাশক বাজারজাতকারী কোম্পানি এলাকার দোকান থেকে কীটনাশকটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই কীটনাশক কোম্পানি কালক্ষেপণ করেছে। তাই তারা অভিযোগ করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শফি কামাল, হযরত আলী, ছেকেন্দার, মন্টু, লাল্টু, আজিবর, কামরুল, জারজিদ, রবিউল, ছাতারুল, আতাউর, শহিদুল ও হাসান জানান তাদের ফুলকপি নষ্ট হয়েছে।
কৃষকরা জানান, তারা সবাই গগনবাড়িয়া বাজারের মাহমুদা এন্টার প্রাইজ নামের একটি কীটনাশকের দোকান থেকে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ‘নিউজিম’ নামক একটি ছত্রাকনাশক পাউডার কিনে জমিতে স্প্রে করেছিলেন। এটি বাজারজাত করেছে ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে লেখা আছে চীনের জিয়াংসু লাফেং বায়োকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড। ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ৫০০ টাকায় কিনে এই ওষুধ স্প্রে করেছিলেন তারা।
কৃষকেরা বলছেন, এই ছত্রাকনাশক কলাগাছে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু বিক্রেতা ফুলকপির জন্য দিয়েছিলেন। এতে তাদের সর্বনাশ হয়েছে। কৃষকেরা জানান, এই ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর গাছ মরতে শুরু করলে তারা এটির বিক্রেতা ছাতাহার আলীকে অবহিত করেন। ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনকেও জানান। কিন্তু মোতালেব বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। আর বিক্রেতা ছাতাহার আলী এবং ব্লেসিং এগ্রোভেটের রাজশাহীর আরএসএম জহুরুল হক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। এরমধ্যেই বাজার থেকে ওই নিউজিম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন।
চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শফি কামাল জানান, গত ১৬ অক্টোবর তিনি তিন বিঘা জমিতে এই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেন। একদিন পর লক্ষ্য করেন, গাছের রঙ হলুদ হলুদ লাগছে। ধীরে ধীরে হলদে রঙ বাড়তে থাকে। তিনদিন পর গাছের কাণ্ড পচে খসে পড়তে শুরু করে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতজন কৃষক বিক্রেতাকে জানালে তিনি প্রথমে পাত্তাই দেননি। এ জন্য তারা লালশাক ও ঘাসে পরীক্ষামূলক এই ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। তাতে দেখা যায়, লালশাক ও ঘাসও পচে মরে গেছে। এরপর তারা ক্ষতিপূরণের জন্য চাপ দেন।
শফি কামাল বলেন, ‘প্রথমে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয় কোম্পানির লোকজন ও ডিলার। এখন ডিলার বলছে, কোন সমস্যা নিউজিমে ছিল না। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।’ কৃষক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমার ২ বিঘা ৩ কাঠা জমির ফুলকপি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। জমি পরিষ্কার করতে একটা গাছেও হাঁসুয়ার কোপ মারা লাগবে না। সব পচে শেষ। একইভাবে ১৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনী বলেন, ‘সমস্যা কিছুদিন আগেই হয়েছে। কিন্তু উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানাননি। এটা আসলে কলায় ব্যবহারের ছত্রাকনাশক। ফুলকপির জন্য কেন দেওয়া হয়েছে তা জানি না। কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেণ ক্ষতি কী কারণে হয়েছে সেটা পরীক্ষা করে বলা হবে।
দুর্গাপুরের ইউএনও সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘কৃষকেরা আমার কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছি। তদন্তে যদি দেখা যায় নিউজিমেই সমস্যা ছিল, তাহলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণও আদায় করা হবে।
মামুন/ হাসান