ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সংকট

সরকারি নির্দেশ অমান্য: স্কুল ছুটির বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ৬ নভেম্বর ২০২৪

সরকারি নির্দেশ অমান্য: স্কুল ছুটির বিশৃঙ্খলা

  • সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে দুপুর ১টায় ছুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় 

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়নে ৮৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে দেয় শিক্ষকরা। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল দশটার মধ্যে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও অনেক শিক্ষকরা আসেন ১১টা। আবার অনেকের ছুটি না নিয়েও বিদ্যালয়ে আসেনা। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন রকমের দুই চারটি ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন তারা। বিকেল চারটা পর্যন্ত ক্লাস নেওয়ার নিয়ম থাকলেও দুপুর ১ টার পরেই একে একে বেরিয়ে পড়েন বিদ্যালয় থেকে। এসব বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা একাধিক অভিযোগ করলেও কোন সুফল এখন পর্যন্ত পাইনি। 

সরেজমিনে (৫ই নভেম্বর) মঙ্গলবার দুপুর ১টায়  বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের রামনগর আব্দুর রশিদ খান জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস কক্ষসহ শ্রেণিকক্ষগুলোয় তালা ঝুলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষকরা এসে পৌঁছান ১১টায় আবার অনেকে ১ টার পরেই বাড়ি ফিরে যায়। যদিও অন্য সব স্কুলের মতোই বিকালে ৪টা পর্যন্ত পাঠদান চলার কথা। কিন্তু সপ্তাহে বেশিরভাগ দিনই দুপুরের খাওয়ার সময় হলেই স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা যার যার মত বাড়ি চলে যায়।

জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন নির্ধারিত সময়েই স্কুল ছুটি হয়। ওই দিন অফিসিয়াল কাজে দুপুরের ১ টার দিকে আমি স্কুল থেকে চলে আসি। অন্যান্য শিক্ষকরা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্কুলে থাকার কথা ছিল।

একই চিত্র দেখা গেছে পাদ্রীশিপুর ইউনিয়নের কানকি গ্রামের আমেনা খাতুন নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। দুপুর ১২ টায় শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা সকলে বাড়ি চলে গেছেন। কোন শিক্ষার্থীও নেই বিদ্যালয়ে। দেখা হয় বিদ্যালয়ের দপ্তরির সাথে একাধিকবার তার কাছে বিদ্যালয় ছুটির বিষয় জানতে চাইলেও কোন উত্তর মেলেনি। 

এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, বিদ্যালয়টিতে শুধু সাইনবোর্ড রয়েছে। ঠিকমতো শিক্ষকরা আসেন না। শিক্ষার্থী সংখ্যাও কম। মাঝেমধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আসলেও দুপুর ১২ টার মধ্যেই ছুটি দিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও বিভিন্নভাবে হয়রানি করে শিক্ষকরা। 

এ বিষয়ে আমেনা খাতুন নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যুবরাজকে তার মুঠো ফোনে ফোন দিলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমারকে জানানো হলে এখন পর্যন্ত তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। 

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে ওই সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু

×