ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ৬ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৫:০৪, ৬ নভেম্বর ২০২৪

খেজুরের রস সংগ্রহে  ব্যস্ত গাছিরা

প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাদরে ভেজা হেমন্তের শেষে শীতের আগমনের বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের। শীতের আমেজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের গাছিরা। কার আগে কে কত বেশি পরিমাণ রস সংগ্রহ করবেন, এই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন তারা। কারণ শীতের সকালে খেজুর গুড় দিয়ে পিঠা-পায়েসের মজাই আলাদা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খেজুর গাছ থেকে গাছিদের রস সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদ বিধৌত উপজেলা বাঞ্ছারামপুর। যেখানে নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতে মেলে সুস্বাদু খেজুরের রস। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথা ভালো করে পরিষ্কার করে সাদা অংশ কেটে রোদে শুকিয়ে আবারও কেটে নলি লাগিয়ে ছোট-বড় বাসন বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস অনেকে হাট-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে মুখরোচক খেজুরের রস। 

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা কোনো এক সময় যেন খেজুরের রস ছাড়া জমতোই না। শীত ও খেজুরের রস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলো। শীত যত বাড়তো খেজুরের রসের চাহিদাও ততো বাড়তো। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানা ধরনের পিঠাপুলি। বিশেষ করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সফিরকান্দি, শেকেরকান্দি, মনাইখালি, কল্যাণপুর, মরিচাকন্দি, শান্তিপুর, খাল্লাসহ ,দরিকান্দিতে। কিন্তু এখন বদলে গেছে সে চিত্র। গ্রামেও মিলছে না খেজুর রস।

উজানচর ইউপির শেকেরকান্দি গ্রামের হাসান বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে শীতকালে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা খেজুরগাছ কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন। আগে যেখানে আমাদের গ্রামে ১০০ থেকে ১৫০ গাছ কাটতো গাছিরা এখন সেটা ১৫ থেকে ২০ এ নেমে এসেছে। আগে এক হাড়ি রসের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা নিতো। এখন এক হাড়ি রসের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আমার অবাক লাগে কীভাবে বাজারে খেজুরের গুড় পাওয়া যায় ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়। যেখানে এককেজি দুধের দাম মাত্র ৮০ টাকা।

একই গ্রামের গাছি রাসেল মিয়া বলেন, শীতকালে সকাল-সন্ধ্যা গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানাগুড় ও পাটালি তৈরি করতেন অনেকে। এখন আগের মতো গাছ ও নেই। যা কিছু গাছ আছে তাতে আগের মতো রস হয় না।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তি ইদ্রিস বলেন, ‘ আমাদের এলাকায় গাছ কেটে রস বের করার কোনো গাছি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা কারো কারো গাছ রয়েছে, কিন্তু কেটে রস বের করার লোক নেই। কৃষাণ (কৃষক) খরচ করে এ কাজে বিশাল লোকসান তাই খেজুরগাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের পর বছর খেজুরগাছ না তোলায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও কেউ কৃষাণ দিয়ে তোলায় তবে, পরে আর কেটে রস বের করার কোনো গাছি না থাকায় বিলুপ্তির পথে খেজুর রস। বাজারে যে খেজুর গুড় পাওয়া যায় সব ভেজাল, বিষ বলা যায়।’ 

রহমান /হাসান

×