ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

অনাবাদি ১ হাজার হেক্টর জমি

দাউদকান্দিতে ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ খালের মুখ 

নিজস্ব সংবাদাতা,দাউদকান্দি॥

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৫ নভেম্বর ২০২৪

দাউদকান্দিতে ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ খালের মুখ 

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফসলি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি। অনাবাদি বিস্তীর্ণ জমিতে এখন কচুরিপানা আর আগাছা। এক দশক আগেও এসব জমিতে ইরি ধানসহ বিভিন্ন রকমের শাকসবজির চাষ হতো।

 

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলা, অবৈধ দখল ও কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে অস্তিত্ব বিলীনের পথে দাউদকান্দির সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প খাল ও নদের মুখ। প্রাচীনতম পানি প্রবাহ একেবারেই বন্ধ গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

 

ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালিতে খালের মুখে বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ইতোমধ্যে খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মূলত ময়লা ফেলার জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত না থাকায় বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে নিয়মিত। এছাড়া খালটির অংশ দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খালের মুখে ময়লার স্তূপ এমন আকার ধারণ করেছে যে, সেখানে এখন আর পানি প্রবাহ দূরের কথা সামান্য পানির সন্ধান পাওয়াও দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ময়লা-আবর্মনার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকাজুড়ে। 

এছাড়া বাজারের হোটেলগুলোর সব ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণেও খালটি এখন মৃতপ্রায়। দ্রুত খালটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

 

জানা যায়,উপজেলার গৌরীপুর, জিংলাতুলি,বারপাড়া, সুন্দলপুর ইউনিয়নে এক সময় এসব এলাকার জমিতে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দেখা যায়, গোমতী ও কালাডুমুর নদীর সংযোগস্থল থেকে সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প নামে একটি খাল গৌরীপুর, বারপাড়া, সুন্দলপুর ও গোয়ালমারী ইউনিয়ন হয়ে দাউদকান্দি গোমতী নদীতে মিশেছে।

 

জমিগুলো এই খালের পানি দিয়েই চাষ হতো। আবার বর্ষা শেষে এই খালই পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ গোমতী নদীর সঙ্গে সংযোগ খালের মুখটি ময়লা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবিদরা মানববন্ধনসহ আন্দোলন করেও খালের মুখে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে পারেননি।

 

পেন্নাই গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক বলেন, বর্ষার পানি জমি থেকে সঠিক সময়ে না নামায় আমাদের জমিগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো চাষবাদ করতে পারছি না। কৃষক আল আমিন ও হারুন বলেন, আমরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করায় কয়েক বছর ধরে আমাদের জমিগুলোতে কোনো ফসল ফলাতে পারছি না।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, ইছাপুর পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার জমিগুলো অনাবাদি থাকে। অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ, পুকুর কাটা এবং খালের সংযোগস্থল বন্ধ করা খাল বন্ধ হওয়ার কারণ। তারা আরো বলেন, খালের মুখটি বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি জমিগুলো অনাবাদি পড়ে আছে।

 

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষি ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, কালাডুমুর নদের মুখটি পরিষ্কার করে খালের পানি চলাচল রাখতে কয়েকবার মানববন্ধন করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারিনি। খালের মুখ বন্ধ থাকায় বর্ষার পানি আসে দেরিতে, যায়ও দেরিতে। এজন্যই দাউদকান্দির বিভিন্ন এলাকার অনেক ফসলের মাঠ অনাবাদি থাকে। আর নব্য ধনী এবং বহুজাতিক কোম্পানির খপ্পরে পরে অধিক মূল্যে কৃষকের জমিও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে, প্রবাসী পরিবার রেমিট্যান্স পেয়ে কৃষিবিমুখ হচ্ছে।

 

দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা  বলেন,উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি কয়েকবার উৎথাপন করেছি ইউএনও মহোদয় সংশ্লিষ্ঠ সকলের সাথে আলোচনা করে অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে বলে জানায়। 

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাঈমা ইসলাম বলেন, গৌরীপুর বাজারের ময়লা আবর্জনায় গোমতী নদীর সঙ্গে সংযোগ খাল বন্ধ হওয়ার বিষয় আমি জেনেছি৷ সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
 

সাইফুল

×