বন্যা ও খরার মাঝেই উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদী বিধৌত চরবাসীরা এবার আমনের ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছে। চরবাসী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। চরবাসীরা জানায় এবার বন্যায় তি কম হওয়ায় এ বছর তিস্তার চরে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে তিস্তা নদীর বিভিন্ন চর এলাকায়।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন চরঘুরে জানা গেলো তিস্তার চরে প্রতিবছর বন্যায় আমন ধানের ব্যাপক তি হলেও এ বছর তেমন তি হয়নি। এ ছাড়া ধানের বর্তমান বাজার দরে সন্তুষ্ট তারা। চলতি বছর দোনপ্রতি (২৭ শতক) ১২ থেকে ১৪ মণ করে আমন ধান পেয়েছেন তারা। এ বছর সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমন ধান উৎপাদনে খরচও হয়েছে বেশি। তবে ধানের মূল্য বেশি থাকায় খরচ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না তাদের। প্রতি মণ ধানের বাজার মূল্য ১২০০ থেকে ১৩৫০ টাকা।
সির্দুনা চরে দেখা যায়, চরের জমিতে আমন ধান কেটে সেখানেই ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরে নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ কৃষকের বাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় হওয়ায় ঘোড়ার গাড়ী বা গরুরগাড়ীতে ধান ও খর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। খেতের পাশে ছোট ছোট টিনের চালার ঝুপড়ি ঘরও বানিয়ে নিয়েছেন অনেকে। সেখানে চলছে বিশ্রাম ও খাবার খাওয়া। আমন ধান ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে তিস্তার চরে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, দোনপ্রতি ১২-১৪ মণ ধান হবে। তাছাড়া এখন বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই এবার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। কৃষকরা আমন ধান তোলার পর ভুট্টা, গম, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চরখরিবাড়ি. বাইশপুকুর, ডাউয়াবাড়ি চর এলাকার হাশেম মিয়া, মোকছেদুল হক ও বক্কর মিয়া সহ কয়েকজন কৃষক জানান, একসময় এ অঞ্চলে খুবই মঙ্গা ছিল। মানুষ কাউন ও গমের ভাত খেত। কিন্তু ১০-১২ বছর ধরে এ অঞ্চলে আগাম জাতের ধান চাষাবাদ হওয়ায় মঙ্গা দূর হয়েছে। কৃষক মানিক মিয়া বলেন, এই মঙ্গা তাড়ানো ধানের চেয়ে খড়ের চাহিদা ও মুনাফা বেশি। প্রতি বছরই ছোট-বড় খামারিদের মাঝে গরুর খাদ্য হিসেবে খড় সঙ্কট দেখা দেয়। সেই সঙ্কট পূরণে আগাম জাতের ধান কেটে মাড়াই করে দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি শ্রমিকরা। বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ ধান হলেও প্রতি আঁটি খড় ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গো-খাদ্য হিসেবে বেশ চাহিদা এ অঞ্চলে। কৃষি অফিস থেকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।
তাহমিন/ জাফরান