বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মহাখালীতে গুলিতে নিহত বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার পূর্ব বেতাল গ্রামের আল আমিন রনি (২৪) মেয়ের বাবা হয়েছেন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রনির স্ত্রী মোসাম্মৎ মিম আক্তার (১৯)।
আল আমিন রনি উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত দুলাল হাওলাদের ছেলে। তিনি রাজধানীর মহাখালীর মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। মহাখালী সাততলা বাউন্ডারি বস্তি এলাকায় মা মেরিনা বেগম, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিম ও ছোট ভাই রহিমকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। রনি নিহত হওয়ার সময় উপজেলার চাখারে বাবার বাড়িতে ছিলেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিম আক্তার।
উপজেলার চাখার একে ফজলুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা রনি বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে ঢাকার মহাখালীতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ নেন। বাড়তি আয়ের জন্য রাতে একটি খাদ্যপণ্য কোম্পানির ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। মা করতেন গৃহপরিচারিকার কাজ। রনির আয় দিয়ে চলত চার সদস্যের এই পরিবার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হন রনি। বিকেল ৫টার দিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করেন মা মেরিনা বেগম।
ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ২০ জুলাই বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামে আনা হয়। ওই দিন রাত ১টায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার আয়েই চলত সংসার। গ্রামের বাড়িতে থাকা দাদির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল রনির কাঁধে। রনি নিহত হওয়ার সময় তার স্ত্রী মিম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আদরের নাতিকে হারিয়ে আজও কান্না থামছে না দাদি শতবর্ষী মরিয়ম বেগম ও মা মেরিনা বেগমের।
রনির মা মেরিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ রনি বেঁচে থাকলে মেয়ের মুখ দেখে কতই না খুশি হতো। সন্তানের মুখ দেখা ও বাবা ডাক শোনার খুবই ইচ্ছে ছিল আমার বাপজানের। রনির শ্বশুর মাছ ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন মাঝি জানান, তার মেয়ে মিম এইচএসসি পাস। মেয়েকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ফকরুল ইসলাম মৃধা জানান, মা-মেয়ে সুস্থ আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে সরকারি যত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সবই দেওয়া হচ্ছে।
শহিদ