জামালপুরে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু
জামালপুর শহরের সরদারপাড়ায় ‘এম এ রশীদ হসপিটাল’ নামের এক বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসবের অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় হাসি বেগম (৩২) নামের একজন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শনিবার ভোররাতে ওই প্রসূতি মারা যান। হাসি খাতুন জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের শীতলকুর্শা গ্রামের নুরুল মল্লিকের স্ত্রী। জানা গেছে, প্রসূতি হাসি বেগমকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে এম এ রশিদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই হাসপাতালের স্ত্রী প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. রুমানা আরমানের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই প্রসূতিকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসক দল প্রসূতির এক কন্যা সন্তান প্রসব করান। কিন্তু প্রায় দুই ঘন্টার অপারেশন শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ ও রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে রক্ত চাওয়া হয়। একে একে ১৪ র্যাগ রক্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রোগীর অবস্থা মুমূর্ষু বলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিছুক্ষণ আইসিইউতে রাখার পরে শনিবার ভোর রাতে হাসি বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত হাসি বেগমের মামা রাজু আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার রুমানা আরমান আমার ভাগনির একটি নাড়ি কেটে ফেলেন। তার ভুল চিকিৎসায় আমার ভাগনিকে অকালে প্রাণ দিতে হলো। নবজাতকসহ আমার ভাগনির অবুঝ তিন শিশু সন্তানের দায়িত্ব কে নিবে? আমরা ন্যায় বিচার চাই। প্রসূতির চাচাতো ভাই রোমান আহম্মেদ বলেন, রাত ৯টায় রোগী মারা গেছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নানা অযুহাত দিয়ে ১৪ ব্যাগ রক্ত নিয়েছে। আমি বলেছি, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে রোগীকে দিয়ে দেন। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাবো। কিন্তু তারা রোগীকে ছেড়ে দেয় নাই। এদিকে শহরের বেসরকারি হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্যবিভাগে বেশ তোলপাড় চলছে।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজওয়ানা রশিদকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছেন সিভিল সার্জন। তদন্ত কমিটির অন্য ডাক্তাররা হলেন ডা. মো. নুরুজ্জামান, ডা. রাশেদা পারভীন মুন্নী ও ডা. রাফিয়া বিনতে রফ। জামালপুরের সিভিল সার্জন ফজলুর হক জনকণ্ঠকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল এম এ রশিদ হাসপাতালে প্রসূতি এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখবো। চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছ। তদন্ত প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।