বাগেরহাটে অতি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘের
ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও সদর উপজেলায় গত সেপ্টেম্বরের ১৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ভারি টানা বৃষ্টিতে ৭ হাজার ঘের প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে যায়। ছোট-বড় নির্বিশেষে চিংড়ি চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন অনেক চাষি। অধিকাংশ চিংড়ি চাষি এনজিও ও ব্যাংকের ঋণের বোঝায় উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
অথচ গত দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি সহায়তা দাবি করছেন চিংড়ি চাষিরা। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সরেজমিন ঘুরে দ্রুত সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার আশ^াস দেয় মৎস্য বিভাগ।
মৎস্য বিভাগ জানায়, মধ্য সেপ্টেম্বরে ৫ দিনের বিরামহীন ভারি বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ঘের ভেসে গেছে। এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গলদা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার চাষিরা। এর সঙ্গে মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও সদর উপজেলার চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চাষিদের দাবি, ঘের প্লাবিত হয়ে কয়েকশ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
ফকিরহাট উপজেলার কলকলিয়া এলাকার সুশান্ত মন্ডল বলেন, ‘যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৮ সালে চিংড়ি চাষ শুরু করি। ১২ বিঘা ও ৪ বিঘার দুইটি ঘেরে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথম বছর খরচ উঠিয়ে মোটামুটিভাবে ভালোই ছিলাম। এ বছর আশা, গ্রামীণ ব্যাংক ও ডাক দিয়ে যাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওই দুই ঘেরে ১২ লাখ টাকা খরচ করি। স্বপ্ন ছিল মূলধনে লভ্যাংশ দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করে একটু ভালো থাকব। কিন্তু ৫ দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
ফলতিতা এলাকার কাজী মিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে। ঘেরের পাড়ের ওপর হাঁটু পানি। নেট, কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কতদূর আছে জানি না।’
নূর মোহাম্মাদ নামের আরেক চাষি বলেন, এখন মাছ ধরার সময়। কিন্তু হঠাৎ দুর্যোগ আমাদের পথে বসিয়ে দিল। আমার ৩টি ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাড়ের সবজি গাছও মরে গেছে।’ মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামের নাসির মিয়া বলেন, আমার ৫০ বিঘার দুইটি ঘেরসহ আশপাশের সকলের ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
চিতলমারী উপজেলা সদরের চাষি মুমিনুল হক টুলু বলেন, এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ঘেরের মাছ ও পাড়ের সবজি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করি আমরা। মাছ বের হয়ে যাওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল। তিনি বলেন, প্রায় প্রতি বছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়।
আবার শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেলে চুন প্রয়োগ করে পরিমাণমতো খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আর্থিক বা প্রণোদনা সহায়তার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।