ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

উলিপুরে ব্রহ্মপুত্রে তীব্র ভাঙন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৩ নভেম্বর ২০২৪

উলিপুরে ব্রহ্মপুত্রে তীব্র ভাঙন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাস ধরে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় সাহেবের আলগা ইউনিয়নের হবিগঞ্জ-খেয়ারচর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিস্ব হয়েছে অনেক মানুষ। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, সাড়ে ৯শ’ বিঘা ফসলি জমিসহ প্রায় তিনশ’ বসতবাড়ি। এসব এলাকার মানুষজন সবকিছু হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। 
এ ছাড়াও ভাঙনের হুমকির কবলে রয়েছে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়, গেন্দার আলগা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাতলামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর নামাজের চর কমিউনিটি ক্লিনিক, উত্তর নামাজের চর নূরাণী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা, উত্তর নামাজের চর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ পাঁকা সড়ক।
গেন্দার আলগা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইরিকা খাতুন (১২) বলেন, আমদের এই জায়গাটাতে অনেক মানুষ বসবাস করত। নদের ভাঙনে সবাই ভিটেমাটি হারিয়ে গেছে। এখনো নদী ভাঙছে আমরা কোথায় যাব তা জানি না। নদী ভাঙনের ফলে আমাদের স্কুল হুমকির মুখে, স্কুল ভেঙে গেলে আমরা কোথায় পড়াশুনা করব জানি না। অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে যাচ্ছে, কিন্তু ভাঙন কমছে না। এখানে আবাদি জমি-বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। এখানকার মানুষ অনেক কষ্ট করে বসবাস করছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। কিন্তু তারা ভাঙন রোধে কাজ করার আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ শুরু করে নাই।  
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙন রোধে সাময়িক সময়ের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে ভাঙনকবলিত এলাকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে কাজ শুরু হবে।

ভৈরবে অপরিকল্পিত খনন, বেড়েছে ভাঙন
নিজস্ব সংবাদদাতা, নওয়াপাড়া, যশোর থেকে জানান, অভয়নগরের ভৈরব নদ ভাঙনের কবলে পড়ে নাব্য হারিয়ে আজ মৃতপ্রায়।  ভৈরব উত্তর জনপদের বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া ভুগিলহাট গ্রামের বেশ কয়েকটি কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, অসংখ্য ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভুগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গাছগাছালি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১০ বছরে একটি রাস্তা নদের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এবার নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি। 
বিআইডব্লিউটিএ ভৈরব নদে অপরিকল্পিত খননের ফলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলার বাঘুটিয়া ও শুভরাড়া ইউনিয়নের দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ভাঙন রোধে সরকারি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায়  প্রতিদিনই বাড়ছে ভাঙনের পরিধি। ওই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।

ভুগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের  মোয়াজ্জিন হাফেজ মো. নাঈম সরদার বলেন, এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা বাঁশ দিয়ে ভাঙন রোধে বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ভাঙন ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। অন্যথায় অল্পদিনের মধ্যে ঈদগা-মসজিদ নদে হারিয়ে যাবে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তৈয়েবুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিত নদ খনন ও বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন রোধে আশু পদক্ষেপ দরকার। 
শুভরাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ভাঙন ঠেকাতে সরকারিভাবে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে দুই গ্রামের মানুষ রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক নদের ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌসলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নদ খননের কাজ করলে ফল ভালো হতো। দ্রুত ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×