সেই বিতর্কিত সহকারী পুলিশ সুপার ( এএসপি) মোঃ নাজমুস সাকিব এখন ভৈরব সার্কেলে পদায়ন হয়েছে। এরই মধ্য তার সাবেক (তালাকপ্রাপ্ত) স্ত্রী ইসরাত রহমান পুলিশের আইজিপি'র নিকট লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছে নাজমুস সাকিব পদায়নের পর থেকে তাকে হুমকি- দুমকি দিচ্ছে। একারনে ইসরাত রহমান নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।
তার নতুন পদায়ন আদেশ প্রত্যাহার করে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বহালসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে অভিযোগে বলা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই এএসপি ৪ বছর বরখাস্ত থাকলেও সেই সময় বৈষম্যের শিকার ছিল, উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এমন ভুল বুঝিয়ে ভৈরবে পদায়ন হয় তার ইসরাতের অভিযোগ।
তার সাবেক স্ত্রীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এএসপি মোঃ নাজমুস সাকিব এর সাথে ইসরাত রহমানের বিয়ে হয়। ওই সময়ে সাকিব র্যাব এ ঢাকায় কর্মরত ছিল। বিয়ের পর স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বলেন। এতে স্ত্রী রাজী না হলে তার ওপর স্বামী সাকিব অত্যাচার - নির্যাতন শুরু করেন। এরই মধ্য তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
চার বছর দুজনে সংসার করার পর ২০২০ সালে নাজমুস সাকিব তার স্ত্রীকে তালাক দেন। পরে স্ত্রী ইসরাত রহমান বিগত ৪ জুন ২০২০ ইং তারিখে ঢাকার আদালতে সাবেক স্বামী সাকিবের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(খ) ও ১১ (গ) ধারাসমূহে শারীরিক নির্যাতন ও ভ্রণ হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন ( মামলা নং -১২১/২১)। উক্ত মামলায় সাকিব তিনমাস জেলে ছিলেন বলে জানান তার স্ত্রী। পরে ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে সাকিব জামিনে জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর স্ত্রীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ ও মামলার কারনে কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। গত সরকারের আমলে এএসপি নাজমুস সাকিব ৪ বছর বরখাস্ত ছিলেন বলে জানায় স্ত্রী ইসরাত রহমান।
সরকার পতনের পর সাকিব তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বুঝায় তিনি ৪ বছর বৈষম্যের শিকার ছিলেন বলে তাকে ভাল কোন স্থানে পদায়ন করা হয়নি। এরই মধ্য গত সপ্তাহে তাকে ভৈরব পুলিশের সার্কেলে নতুন করে পদায়ন করা হয়। পদায়নের পর তিনি কর্মস্থল ভৈরবে যোগদান করেন। তিনি কাজে যোগ দেয়ার পর সাবেক স্ত্রী ইসরাত রহমানকে নানা ধরনের হুমকি- দুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন আইজিপির কাছে।
এবিষয়ে তার সাবেক স্ত্রী অভিযোগকারী ইসরাত রহমান জানান, আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। তিনি বার বার ফোনে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমি আতংকে আছি। তিনি বলেন, সাকিবের বিরুদ্ধে আমার তিনটি মামলা চলমান আছে। একটি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অপর দুটি কাবিনের ১০ লাখ টাকা আদায় ও আমার শিশু সন্তানের খরপোষ আদায়ের জন্য মামলা।
পুলিশের আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে সাকিব ভৈরবে পদায়ন হয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে আমার ঘটনায় ৪ বছর বরখাস্ত ছিলেন, বৈষম্যের শিকার হয়েছেন যা সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট তার দাবি। তার পদায়ন প্রত্যাহার না করলে তিনি পদে থেকে আবারও হুমকি দুমকি দিতে পারেন বলে জানান।
ইসরাত রহমানের আইনজীবি এ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এখনও চলমান রয়েছে। তিনি পদায়ন হয়েই তার সাবেক স্ত্রীকে হুমকি- দুমকি দিচ্ছেন যা অপরাধ। এভাবে হুমকি দিলে স্বাক্ষীগন কিভাবে মামলায় স্বাক্ষী দিবেন। কারো বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকলে তাকে কাজ থেকে বিরত রাখতে হয়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত এএসপি মোঃ নাজমুস সাকিবের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি তার সাবেক স্ত্রী ইসরাত রহমানের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক। সে যত মামলা করছে সব মামলা আমি আইনি মোকাবেলা করব। হুমকির অডিওর বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ফেক অডিও এটা।
তাকে তালাক দেয়ার পর সে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে তার দাবি। তিনি আরও বলেন, আমার যোগ্যতা বলে আমি ভৈরব সার্কেলে পদায়ন হয়েছি। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হলে সত্য প্রকাশ হবে বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, অভিযোগের বিষয়গুলি তার পারিবারিক বিষয়। পুলিশ বিভাগে চাকরীর কোন বিষয় নয়। আমরা দেখব তার পদায়নের পর কর্মে ভাল কাজ করছে কিনা। যেকোন মানুষ বা পরিবারের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেই পারে। অভিযোগ দিলে তা তদন্ত হবে। তদন্ত দোষ বা অপরাধ প্রমান হলে অফিসিয়াল নিয়মে শাস্তির বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি তবে আমার কাছে তার কোন অভিযোগ নেই, আছে আইজিপি স্যারের নিকট। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।