বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রী মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহতের ঘটনার বিচার দাবিসহ বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে নিরাপত্তার দাবিতে অবরোধের ১৩ ঘণ্টা পর যাত্রীবাহী ৩০টি বাস বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আটকে রেখে সড়ক ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাসের মালিক অথবা তাদের প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত বাসগুলো শিক্ষার্থীদের জিম্মায় থাকবে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের উভয়প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এমনকি মহাসড়কের মধ্যেই নিহত মাইশার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এরপর শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগীয় প্রশাসনের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও বাস মালিক পক্ষের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়ার দাবিতে অনড় থাকায় অবরোধ চলতে থাকে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর যাত্রীবাহী বাস ছাড়া অন্যসব যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নিহত মাইশা নেত্রকোনার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। মাইশা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা ঢাকায় বসবাস করেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকায় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মাইশার লাশবাহী গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে রেখে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে নিহত মাইশার বাবা, মামা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী এবং বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন মাইশার মা। তার সাথে দেখা করেছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুচিতা শারমিন। উপাচার্য তার সঙ্গে দেখা করে সান্তনা দিয়েছেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পরেন মাইশার মা।
উপাচার্য সুচিতা শারমিন জানিয়েছেন, মাইশার পরিবারকে কোনোভাবেই সান্তনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। তারপরেও শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, তার বেশিরভাগ বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ভোলা সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে।
খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব দাবি বাস্তবায়ন হবে। এমনকি যাদের বিচার চাওয়া হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারেও পুলিশ কাজ শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে গতিরোধকের কাজ শুরু হয়েছে। ফুটপাত ও ওভার ব্রিজের জন্য অর্থের প্রয়োজন।
বিক্ষুব্ধ ববির শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন এবং বাস মালিক পক্ষের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির করতে হবে। তা না হলে তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না। সন্ধ্যার পর উভয়প্রান্ত থেকে সব যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হলেও ৩০টি বাস আটকে রাখা হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবং ঘাতক বাসের মালিককে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে ৩০টি বাস ক্যাম্পাসে আনা হয়েছে। ঘাতক বাসের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত বাসগুলো শিক্ষার্থীদের জিম্মায় থাকবে।
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-পটুয়াখালী সড়ক পারাপারের সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামের একটি বাস বেপরোয়াগতিতে এসে মাইশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি সড়কে ছিটকে পরেন। এরপর বাসটি পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইসাকে চাকায় পিষ্ট করে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাইশাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর পরই শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাসটিকে নগরীর রূপাতলী এলাকায় আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বাসের চালক, হেলপার ও মালিকের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।