বুড়িগঙ্গা থেকে তুলে আনা প্লাস্টিকের পানির বোতলে নৌকাভর্তি
বুড়িগঙ্গার গল্পটা দিয়ে শুরু করা যাক। রাজধানী ঢাকার নদী বলতে এই একটাই। কিন্তু নদীর বৈশিষ্ট্য সামান্যই ধরে রাখতে পেরেছে বুড়িগঙ্গা। এখানে পানি যারপরনাই ময়লা। নোংরা। দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গন্ধে টেকা যায় না। নদীতে প্রতিমুহূর্তে ময়লা-আবর্জনা, কারখানার বর্জ্য ইত্যাদি ফেলা হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি বোধহয় ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের পানির বোতল। কী করে বুঝলাম? বুড়িগঙ্গায় ভাসতে থাকা কিছু নৌকা দেখে। নৌকাগুলো প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে একেবারে ভর্তি ছিল।
বিস্তারিত জানতে চাইলে সংগ্রাহক বললেন, এসব বোতলের কিছু পানিতে ভাসতে থাকে। কিছু তলিয়ে যায়। তারা উপর থেকে বোতল কুড়িয়ে নেন। নিচ থেকেও সংগ্রহ করেন। তাই বলে এত বোতল! বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর: ‘এইখানে আর বেশি কই, আরও বেশি আছে অন্য নৌকায়।’ এমন তথ্য আমাদের নাগরিক সচেতনতা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয় বৈকি। আরও ভয়াবহ যে তথ্যটি পাওয়া গেল সেটি শুনে অনেকেই মিনারেল ওয়াটারের বোতল কেনার আগে দুবার ভাববেন।
নদীপারের একাধিক ব্যক্তি জানালেন, বুড়িগঙ্গা থেকে তুলে আনা এসব বোতল কিনে নিয়ে সেগুলোকে আবারও ব্যবহার করে একটি প্রতারক চক্র। বোতল পরিষ্কার করে তাতে নতুন করে পানি ভরা হয়। আর তার পর? বিক্রি করা হয় মিনারেল ওয়াটার বলে! ভাবা যায়? তাই সতর্ক করে দিয়ে বলি, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় বা পথেঘাটে তাড়াহুড়া করে মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনতে যাবেন না। একটু পরখ করে নেবেন। তা না হলে কী হতে পারে সে তো বুঝতেই পারছেন।
ওরা বাংলাদেশের মুখ ॥ আবারও নারী শক্তির বিপুল বিজয়। বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা দেখিয়ে দিল, কেউ তাদের ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না। সামাজিক বাধা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এর পরও তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। পর পর দু’বার সাফ চ্যাম্পয়িন, সে তো যে সে কথা নয়। আগেই ভারতের মতো দলকে হারিয়েছিল তারা। বুধবার ফাইনালে ২-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুলেছে। পারফর্মেন্সও ছিল অসাধারণ। কোনো ম্যারম্যারে ম্যাচ এটি ছিল না। বরং শক্তিশালী নেপালের বিরুদ্ধে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে জিততে হয়েছে।
খেলাটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু কার্পণ্য লক্ষ্য করা গেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে নানা উপায়ে যারা খেলা দেখেছেন তারা সবাই ছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ। রাতে রেফারির শেষ বাঁশিটি বেজে ওঠতেই ছেলে বুড়ো সবাই একসঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এর পর থেকে যে যেভাবে পেরেছেন অভিনন্দিত করেছেন খেলোয়ারদের। ফেসবুকের কত শত ইস্যু! সব হারিয়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রত্যেকে নারী ফুটবলের সাফল্য উদ্যাপন করছিলেন।
বিভিন্ন ছবি শেয়ার করা হচ্ছিল। ফুটবলারদের মাঠের ছবি ঘুরছিল নিউজ ফিডে। তার একটু পর থেকে আরেক ধরনের ছবি। সেসব ছবিতে দেখা যায়, বিছানায় ট্রফি পাশে নিয়ে ঘুমোচ্ছেন ফুটবলাররা! কী যে মিষ্টি সেই ছবি! সুমাইয়া, মারিয়া মান্দা, শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, রূপনা চাকমা কিংবা সানজিদা আক্তারদের পোস্ট করা ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এভাবে রাতভর চলে আনন্দ ভাগাভাগি। সাধারণ মানুষের মতো তারকা ক্রিকেটাররাও বিজয়ী নারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
একজনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। বাংলাদেশের খ্যাতিমান ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘ওরা বাংলাদেশের মুখ।’ এই একটি ছোট্ট উচ্চারণ যেন সব বলে দেয়। ঠিকই তো, যারা ৩০ লভঔ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে তারাই আমাদের যোগ্য প্রতিনিধি। এরই মাঝে জাতীয় পতাকা ওড়াতে ওড়াতে দেশে ফিরেছেন ফুটবলাররা।
এবারও ছাদখোলা বাসে দেখা গেছে তাদের। সবার মংপরে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকেই ট্রফি উঁচু করে দেখাচ্ছিলেন। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা অভিবাদন জানাচ্ছিলেন তাদের। অনেকেই বলছিলেন, শুধু ফুটবলে নয় সব ক্ষেত্রে মেয়েরা এভাবে এগিয়ে যাবে। সেদিন দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছেন তারা।
উৎসবে ফেরার চেষ্টা ॥ উৎসব অনুষ্ঠানে ফেরার চেষ্টা করছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উদ্যোগী হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে লালন উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এর পর আজ নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে তারা আয়োজন করছে যাত্রা উৎসবের। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এর পর থেকে এক সপ্তাহ ধরে চলবে পরিবেশনা। একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তালিকাভুক্ত ৭টি যাত্রাদল ঢাকায় আসবে।
সাত দিনে তারা সাতটি যাত্রাপালা পরিবেশন করবেন। যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সুরভী অপেরার ‘নিহত গোলাপ’। আগামীকাল শনিবার পরিবেশিত হবে নিউ শামীম নাট্য সংস্থার পালা ‘আনার কলি’। তৃতীয় দিনে থাকবে বঙ্গবাণী অপেরার ‘মেঘে ঢাকা তারা’, চতুর্থ দিন নর-নারায়ণ অপেরার ‘লালন ফকির’।
আয়োজনের পঞ্চম দিনে থাকবে বন্ধু অপেরার যাত্রা ‘আপন দুলাল’, ষষ্ঠ দিনে দেখা যাবে শারমিন অপেরার পালা ‘ফুলন দেবী’। যাত্রাবন্ধু অপেরার ঐতিহাসিক পালা ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ দিয়ে শেষ হবে উৎসব। সময় করে যে কোনো দিন ঘুরে আসতে পারেন। গ্রামীণ ঐতিহ্যের যাত্রাপালা, নিশ্চিত বলা যায়, শৈশব স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আপনাকে।