জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের সহিদার রহমান জানালেন অন্তসত্ত্বা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা না পেয়ে ওই দিন রাত ১১টার দিকে পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে সিজারিয়ান করানো হয়। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তার অভিযোগ তিনি সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাননি।
দীর্ঘদিনে পুঞ্জিভুত সমস্যা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে নীলফামারী জেনারেল ২৫০ শয্যার হাসপাতাল। এতে করে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীরা সেবা পাচ্ছেনা। ভতির্ রোগীদের ৮০ শয্যা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে ওয়াডের মেঝেতে রোগী রাখা হচ্ছে। নতুন বিছানার কোন বরাদ্দ নেই।
বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার। এখানে রোগীদের জন্য শয্যা আছে ১৭০টি। বাকি ৮০টি না থাকায় মেঝে ও বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। এ ছাড়া রোগীদের বাড়ি থেকে আনতে হয় কাঁথা-বালিশ ও বিছানাপত্র। শয্যার বিপরীতে প্রায় তিন গুণ রোগী ভর্তি থাকেন।
হাসপাতালটি ১০০ শয্যার যে জনবল থাকার কথা তার চেয়েও কম জনবল দিয়ে চলছে। নেই চক্ষু, সার্জারি বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে গাইনি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র একজন করে। নেই চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ওষুধ।
জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগী অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতা, বিছানা সংকট, ওষুধ সংকট, খাবার সরবরাহে অনিয়মসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। দাড়োয়ানী সুতাকল এলাকার বেলাল হোসেনের স্ত্রী জবা আক্তার একদিনের নবজাতক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওয়ার্ডের ভেতরে রোগীদের দিয়ে ঠাসা,যেন প্রবেশ করা দায়।
বিছানাপত্র তো নেই, বাড়ি থেকে কাঁথা-বালিশ এনে বারান্দায় বিছিয়ে চিকিৎসা নেন। রোগীদের অনেক কষ্ট। বাথরু মগুলোর অবস্থা বেহাল। নিয়মিত করা হয়না পরিস্কার। হাসপাতানে নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।
দুই মাসের শিশু সিহাবকে নিয়ে হাসপাতালে আসা মমতা বেগম বলেন,বুকব্যথা, সর্দি-জ্বর ও কাশি নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে সন্তানকে ভর্তি করি। ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বারান্দায় অনেক কষ্টে চিকিৎসা নিচ্ছি। ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য আমাদের টাকা-পয়সা নেই। তাই এই গৃহবধু কষ্ট করছেন।
একই ওয়ার্ডে শিশু বিপাশাকে ভর্তি করা কণিকা রায় বলেন, ‘গত সাত দিন ধরে জ্বর-সর্দি, কাশি ও বুকব্যথার কারণে সন্তানকে নিয়ে ভর্তি হয়েছি। ভেতরে থাকার জায়গা নেই, বিছানাও নেই। বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বিছানাপত্র এনেছি। ভেতেরে এক বিছানায় চার-পাঁচ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আরিফুজ্জামান বলেন, ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক ও অবকাঠামোগত সংকট কাটেনি এখনও। ২০১৩ সালে পাশেই একটি সাততলা ভবন নির্মিত হলেও এখনও চালু করা যায়নি। কারণ সিঁড়ি ও লিফট না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের সেখানে নেওয়া যাচ্ছে না। গণপূর্ত অধিদফতর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব কিছু ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেখানে গেলে রোগীদের ভোগান্তি থাকবে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি আমরা।
সুত্র মতে প্রতিদিন ইনডোরে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগীকে সেবা দিতে হয়। এ ছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী চিকিৎসা নেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ১৪৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন ৪২ জন। অর্থাৎ ১০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, সার্জারি ও স্কিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।