আগিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস
“পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।” আধ্যাত্মিক সেই গানের ঠিক যেন বাস্তব প্রতিফলন।
নিজের জমি থাকা সত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যের জমিতে ঘর নির্মাণ করে দাপ্তরিক কাজ করে আসছেন কর্তৃপক্ষ। যারা জমির বন্দোবস্ত, জমা-খারিজসহ জমির মালিকানা নিশ্চিত করে থাকেন তারাই অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে নিজেদের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করে আসছেন।
বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও এটাই বাস্তব। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের দু’টি ভূমি অফিসের চিত্র এটি। যার একটি হলো- উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। আর এই অফিসটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নে। আপরটি হলো- উপজেলার আগিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এই অফিসটির অবস্থান পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের পূর্বধলা রাজপাড়া নামক স্থানে। নিজেদের জমি থাকা সত্যেও অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে দাপ্তরিক কাজ করাটাকে অনেকেই নিজ ভূমে পরবাসী বলে মনে করছেন।
গোহালাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, একটি টিনশেড ঘরে দাপ্তরিক কাজ চলছে। ঘরটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মইলাকান্দা মৌজায় শ্যামগঞ্জ বাজারের পাশে। যেখানে ১নং খাস খতিয়ানে ১৮০৭ ও ১৮০৮ বিআরএস দাগে প্রায় ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ জানান, পাকিস্তান আমলের আগে থেকেই এই অফিসটি গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মইলাকান্দা মৌজায় অবস্থিত।
গোহালাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অফিসটি স্থানান্তরের জন্য উপজেলার মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। অফিসটি গৌরীপুর থেকে পূর্বধলায় স্থানান্তরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর বা পার্শ্ববর্তী খাস জমিতে করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে স্থানান্তর করা হলে এই ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের নিজ ইউনিয়নে ভূমি সেবা নিতে পারবে।
অপরদিকে পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের পূর্বধলা মৌজা অবস্থিত আগিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিআরএস ১০, ১১ দাগে ১নং খাস খতিয়ানে ১ একর ৫০শতাংশ জায়গার এক অংশে ঐ ভূমি অফিসটি একটি টিনশেড ঘর। আগিয়া ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের লোকজন এখানে ভূমি সেবা নিতে আসেন। নিজ ইউনিয়ন থেকে অফিসটি অপেক্ষাকৃত দূরে এবং এক কর্নারে হওয়ায় সেবা গ্রহীতারে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অত্র অফিসে সেবা নিতে আসা বালিয়া গ্রামের হাবিবুর বলেন, অফিসটি অন্য উপজেলায় এবং কর্নারে পরায় আমাদের সেবা নিতে কষ্ট হয়। তাই তিনি অফিসটি নিজ ইউনিয়ন আগিয়ার হাটকান্দা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করার দাবী জানান।
উক্ত অফিসের ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. শামছুল হক নয়ন বলেন, লোকমুখে জানতে পেরেছি জমিদারী আমল থেকেই এখানে ভূমি কর আদায়সহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আগিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সানোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, অফিসটি স্থানান্তরের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেও পারা যায়নি।
এছাড়া উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ধলামূলগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও নারান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নিজস্ব কোন জায়গা না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে তাদের দাপ্তরিক কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. খবিরুল আহসান ইত্তেফাককে জানান, গোহালাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি পূর্বধলা উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নে স্থানান্তরের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। উপযুক্ত স্থানে জমি পেলে অফিসটি স্থানান্তর করা হবে। আগিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জন্য আগিয়া ইউনিয়নে জায়গা না পাওয়ায় বর্তমানে যেখানে আছে সেখানেই অফিসের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
ইসরাত