জরাজীর্ণ সড়ক পড়ে থাকে আগের মতোই। এভাবেই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
৩০ অক্টোবর - উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের পশ্চিমে ১৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন নারায়ণহাট-ধামারখীল কাঁচা সড়কটি যেন ভোটের ‘ট্রাম কার্ড’। নির্বাচন আসলে সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে হাজির হন প্রার্থীরা। নির্বাচিত হলেই আর দেখা মিলে না তাদের। জরাজীর্ণ সড়ক পড়ে থাকে আগের মতোই। এভাবেই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সূত্র জানায়, তৎকালীন এমপি জামাল উদ্দিন আহমেদ থেকে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজামান সওদাগর থেকে আবু জাফর মাহমুদ পর্যন্ত সকল জনপ্রতিনিধি নির্বাচন আসলে সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে হাজির হতেন এ এলাকায়। নির্বাচিত হলেই আর দেখা মিলেনি তাদের। এভাবেই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চলছে ভোটের "ট্রাম কার্ড" খ্যাত এই সড়ক নিয়ে রাজনীতি। এমনটাই অভিযোগ করছেন ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী।
তারা বলেন, ১৪ কিলোমিটার সড়কটি কখনোই পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে সমাজকর্মীরা এলাকাভিত্তিক কিছু সংস্কার করেছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় ছোট ছোট বাজেটে সড়কের মাঝে-মধ্যে অল্প-স্বল্প উন্নয়ন করলেও বর্তমানে তা নষ্ট হয়ে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ১ কিলোমিটার সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ গত দেড় বছর আগে শুরু হলেও এখন তা প্রায় বন্ধ। ফলে আরও দুর্ভোগ বেড়েছে এলাকাবাসীর।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৪ কিলোমিটার এই সড়কের পুরোটাই বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ ও কাদামাটিতে ভরা। বর্ষাকালে কাদার কারণে এই সড়ক কোন ধরনের যান চলাচলের উপযোগী থাকে না। এলাকার একমাত্র বাহন মোটরসাইকেল। খানা খন্দের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। জরুরি প্রয়োজনে ৩-৫ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়ায় কোন যানবাহন ভাড়ায় আনলেও থাকে জীবনের ঝুঁকি । বর্ষাকালে এলাকাবাসীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। গুরুতর অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে বেগ পেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সসহ যেকোনো গাড়ির চলাচলের কোন সুযোগ থাকে না । নিতান্ত প্রয়োজনে কোন যানবাহন ভাড়ায় আনতে চাইলে গুণতে হয় দুই-তিন গুণ বাড়তি ভাড়া।
স্থানীয়রা জানান, কাঁচা এই সড়কটি সংস্কার না করায় প্রায় সবস্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।ফলে চাঁনপুর, সিংহপাড়া, মালেক সওদাগর বাড়ি, গুড়া মিয়ার টিলা, মাইজকান্দি, চিকনছড়া, জমাদারখীল, যৌগ্যারখীল, ধামারখীল, ঈদগাঁহ, লম্বাথলি, কুমারী, ঢালারমুখ ও দুর্গা বিলসহ মোট ১৫টি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে এসব এলাকায়। সড়কটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে। ৬-৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা তাদের পক্ষে কষ্ট হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে মোটর সাইকেল বা অটোরিকশা দিয়ে কোনো রকমে চলাচল করা গেলেও সামান্য বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে,কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়ার জন্য পাওয়া যায় না কোন যানবাহন। মোটরসাইকেলই একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যাতায়াত জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন ঐ এলাকার বিভিন্ন বয়সী মহিলারা।
কুমারী গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ মো. এরশাদ ও আব্দুল খালেক জানান, বাজারে আসা-যাওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। কেউ অসুস্থ হলে যানবাহন পাওয়া যায় না বলে ঠিক সময় ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলে প্রায় যাতায়াত বন্ধ থাকে। এই সড়কে সিএনজি ও মোটরসাইকেল উল্টে যায় বলে অন্য এলাকার চালকরা আসতে চান না।
অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন জানান, অনেক কষ্ট করে গাড়ি কিনেছি। কিন্তু রাস্তার জন্য গাড়িটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন গাড়ি মেরামত করতে গিয়ে অর্থের হিমশিম খাই। বর্ষাকালে তো গাড়ি চালানো যায়ই না'।
অর্নব ত্রিপুরা নামের স্কুল শিক্ষার্থী বলেন,প্রতিদিন ৭-৮ কিলোমিটার পায়ে হেটে আমরা স্কুলে যাওয়া লাগে। কোনো গাড়ী পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে আমরা সাইকেল চালিয়ে যেতে পারলেও মেয়েরা পায়ে হেটে যাওয়া লাগে সারা বছর। স্কুল থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ রাস্তার জন্য স্কুলে যেতে আসতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।
স্কুল শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার বলেন, সড়কের ঝাঁকুনিতে গর্ভবতী নারী ও হার্টের রোগীদের ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কে চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বড় বড় গর্ত আর খানা খন্দের কারণে মোটরসাইকেল ব্যতীত কোন যানবাহনও পাওয়া যায় না। বর্ষাকালে রাস্তায় কাদা ও পানি জমে থাকায় হেটেও চলাচল করা যায় না।
দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে জনগণের ভোগান্তি লাগভের দাবি জানিয়ে ইউপি সদস্য জহির উদ্দিন আজম বলেন, রাস্তাটির শীঘ্রই কাজ ধরবে ধরবে শুনছি গত পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন চোখে পড়েনি। সড়কটি করার জন্য দাবি জানাতে জানাতে আমরা হয়রান, ক্লান্ত। আমাদের জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় লাগে। এ সড়কটি আদৌ হবে কিনা, সে প্রশ্ন এখন সবার মধ্যে। এটি সংস্কারের জন্য এখন জনগণ নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
স্থানীয় জামায়াত নেতা ও দু'বারের চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ সত্তার জানান, আমার জন্মের পর থেকে দেখছি এ রাস্তাটির বেহালদশা। দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছরেও এ রাস্তা না হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। বিভিন্ন সময় এলাকাভিত্তিক সমাজকর্মীরা মিলে এই রাস্তার টুকিটাকি সংস্কার কাজ করেছে। আমি যতটুকু জানি, রাস্তাটি এখনো সড়ক ও জনপথের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রাস্তাটিকে অতি দ্রুত সড়ক ও জনপদের অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার করা এখন সকলের প্রাণের দাবি। তা না হলে, এলাকার জনগণ নিয়ে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করব।
নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, "নারায়ণহাটের প্রধান সমস্যা সড়কটি। অনেক বছর আগে বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে মাঝে মাঝে ইট বসিয়েছি। এমপির বরাদ্দ থেকে ৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এ রাস্তার জন্য। টেন্ডার প্রক্রিয়া বাকি ছিল। কিন্তু সেই বরাদ্দ কমে এখন এক কোটি ৭২ লক্ষ কেনো হলো আমার বোধগম্য নয়। এখন,১৪ কিলোমিটার সড়কের ১ কিলোমিটারের কাজ দেড় বছর আগে শুরু হয়ে এখন প্রায় বন্ধ। আমাদের সবার প্রাণের দাবি, এই সড়কটি নির্মিত করা হোক"।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিডি) তন্ময় নাথ জনকন্ঠকে বলেন, এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কটি এখনো হয়নি সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রজেক্টে সড়কটির নাম প্রস্তাব করেছি। আমাদের প্রকল্প বাজেট হলে আগে এ সড়কটিই করবো। অলরেডি এ সড়কের ৯০০ মিটারের কাজ শুরু হয়ে বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকলেও শীঘ্রই বাকী কাজ চালু হবে।
টুম্পা