উত্তরাঞ্চলে এবার পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে
বাজারে আসতে শুরু করেছে পানিফল। খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধি। জলাশয়ে চাষ হয় বলে একে পানিফল বলা হয়। পানিফলের আরেকটি নাম পানি শিঙাড়া। কারণ শিঙাড়ার মতো দেখতে। নামের যেমন বাহার, কাজের বহরও তেমন। এটি স্বাদে পানসে হলেও মানবদেহের জন্য প্রচুর উপকারী। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বিচ্ছিন্নভাবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতকালীন ফসল পানিফল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। গত বছর পানিফলের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আরও বেশি জমিতে পানিফল চাষ করছেন চাষিরা। জয়পুরহাট, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর পাবনায় এবার পানিফলের ব্যাপক চাষ হয়েছে। পতিত জলমগ্ন জমিতে পানিফল চাষ হয়। ভাদ্র-মাস থেকে মোটামুটি আবাদের দুই মাস থেকেই ফল তোলা শুরু হয়। বর্তমানে পানি ফল বাজারে বিক্রি হয়েছে।। প্রতি বিঘায় ২ থেকে আড়াই টন ফলন পাওয়া যায়। সে হিসেবে প্রতি হেক্টরে ১৮-২০ টন পর্যন্ত ফলন হয়।
চাষিরা বলছেন জলাশয়ে পানিফলের চাষাবাদ প্রতিবিঘায় খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা থেকে আয় হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিমণ পাইকারি পানিফলের মূল্য প্রায় দুই হাজার টাকা। তবে ফল দোকানদাররা কেজি বিক্রি করছে ৮০ টাকা দরে। পানি ফল চাষিরা জানায় এবার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় এক হাজার হেক্টর পতিত জলাশয়, খাল বিলে পানি ফল চাষ করা হয়েছে।
এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম Water chestnut, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ঞৎধঢ়ধ নরংঢ়রহড়ংধ, পরিবার- ঙহধমৎধপবধব। এটি ইংরেজিতে Water chestnut হলেও স্থানভেদে Water caltrop, Buffalo nut, Devil Pod- এসব নামে পরিচিত। প্রজাতির নাম বাইস্পাইনোসা মানে দুটি কাঁটা থেকেই বোঝা যায় যে, ফলে দুটি কাঁটা বর্ষজীবী জলজ ও গাছ। সাধারণত চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন, আফ্রিকা- এসব দেশে পানিফল আবাদ হয়। এটি যদিও অনেকে পানির বাদাম বলে, কিন্তু আসলে বাদামের কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই এতে।
এটি পুরোপুরিভাবে পানীয় ফল। কাঁচা অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া যায়। চীনে বিভিন্ন সবজির সঙ্গে মিশিয়ে এ সবজি রান্না করা হয়। চীনের খাদ্যতালিকায় পানিফল বেশ জনপ্রিয় এবং আবশ্যকীয়। চীনারা পানিফলকে শুকিয়ে আটা তৈরি করে। সে আটা দিয়ে তারা পিঠা, কেক, বিস্কুট তৈরি করে এবং বাজারে বিক্রি করে। তারা পানিফলকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। কোথাও কোথাও পানিফল গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অতিপরিচিত পানিফলটি শুধু গ্রামেই নয়, শহরের ফুটপাতের ফলের দোকানে স্থান করে নিয়েছে।
পানিফল চাষিরা জানান, পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ করছি আমরা। এ ফলের গাছ হয় পানিতে। স্থির বা ধীর প্রবাহমান স্রোতের পানিতে পানিফল জন্মে জানিয়ে গাবতলীর খইলশাকুড়ি বিলে বেলাল হোসেন, সোহেল বলেন, তারাসহ সাতজন
প্রতি বছরই পানিফল চাষ করে থাকেন। যে সময় এ ফলের চাষ করা হয়, তখন কৃষকের হাতে কাজ কম থাকে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই তারা এ ফল চাষ করেন। তারা জানায়, পানিফলের কয়েকটি প্রজাতি আছে। ফল থেকে বংশবিস্তার হয়। পানিফলের গাছ ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নিচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপরে পাতাগুলো ভাসতে থাকে। মূলকা-ের সঙ্গে গাঢ় সবুজ বা লালচে সবুজ ত্রিভূজাকৃতি মোটা ও নরম পাতাগুলো গোলাকারভাবে পানির ওপর ভাসে।
পাতা ৮ সেন্টিমিটার লম্বা ও পাতার কিনারা খাঁজকাটা, প্রায় ৬ সেন্টিমিটার চওড়া। পাতার বোঁটা পশম যুক্ত। পত্রফলক বেশ মাংসল পুরু তেল তেলে। পানিফলের ফুল ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের উভলিঙ্গ ফুল হয়। ফল দেখতে শিঙাড়ার মতো তিন কোনাকার। দুপাশে শক্ত দুটি কাঁটা থাকে। তবে ফল ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, পানিফল দেখতে যেন অবিকল গরুর মাথার মতো। দুপাশে শিঙের মতো দুটি কাঁটা ফলের ওপর চোখ নাক মুখের অবয়ব অত্যন্ত স্পষ্ট। ফলের রং নীলাভ সবুজ বা কালচে সবুজ। পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপি-াকার বা ত্রিভূজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। কাঁচা ফলের নরম শাঁস খেতে বেশ মজা। রসাল ও মিষ্টি মিষ্টি ভাব।
গাছের শিকড় থাকে প্যাক বা কাদার মধ্যে, কা- থাকে জলে ডুবে, পাতা ফুল ও ফল ভাসে পানির উপরে। পাতা দুটি স্তরে গোলাপের পাপড়ির মতো চক্রাকারে বিপরীতমুখীভাবে কা-ের ওপর সাজানো থাকে। পাতা অনেকটা কচুরিপানার পাতার মতো দেখতে, তবে ছোট ও পুরু, গাঢ় সবুজ। পাতায় শিরা তেমন চোখে পড়ে না মাংসল ভাবের জন্য। কা- নলাকার দড়ির মতো, পেন্সিলের মতো মোটা হয়। গাছ ৫ মিটার গভীর পর্যন্ত পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। পানিফল উদ্ভিদকে অনেক সময় জলজ আগাছা হিসেবে গণ্য করা হয়। পানি ফলের ৪ পাপড়ির ছোট ছোট ফুলগুলো খুবই মনোমুগ্ধকর।
আগাম লাগালে প্রতি গাছে ১০-১২টি শাখা হয়। আর দেরিতে লাগালে প্রতি গাছে ৬-৭টি শাখা হয়। প্রতি শাখায় ৬-৭টি ফল আসে। তবে অভিজ্ঞতায় বলে পানিফলের গাত্রবৃদ্ধি বা বাড়বাড়তি ফুল আসার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। দেরিতে আসা শাখার ফল একটু ছোট এবং দুর্বল হয়। জুন মাসে বৃষ্টি হলে চারা লাগানো হয়। তবে পানির ব্যবস্থা থাকলে অনেকে মে মাসেও চারা লাগান। বাংলা আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত চারা লাগানো যায়। মৌসুম শেষে পরিপক্ব ফল কোন পুকুরে, পানিযুক্ত স্থানে, কিংবা কাদা পানিযুক্ত পাত্রে রেখে দেয়া হয়। কয়েক মাস পর ফল থেকে চারা গজায়। সে চারা পরবর্তী মৌসুমে মূল জমিতে লাগানো হয়।
দুই মাসের মধ্যে ফুল আসার ১৫-২০ দিন পর ফল তোলার মতো পরিপক্ব হয়। ফলগুলো ১০-১২ বছর পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম স¤পন্ন থাকে। অবশ্য ২ বছরের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়। সাবগ্রাম-বরিয়া এলাকায় চাষ করেছেন আব্দুস সামাদ, বক্করসহ কয়েকজন। তারা জানান, নিচু জমি হওয়ায় এখানে ফসল হয় না, তাই প্রতি বছর তারা এখানে পানিফল চাষ করে থাকেন। তাদের জমি থেকেই ব্যবসায়ীরা ফল কিনে নিয়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চেলোপাড়া ব্রিজের পাশে চাষিবাজার এলাকায় বাজার বসে। ব্যবসায়ী আবু বক্কর জানান, আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত এ বাজারে পানিফল বিক্রি হয়ে থাকে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ২০০ মণ পানিফলের কেনাবেচা হয় এ বাজারে।
এ ছাড়া ঢাকার পাইকাররা এসে পানিফল ক্রয় করে নিয়ে যায়। নওগাঁ সদরের খাগড়া বিল, মরা বিল, হাসাইগারি বিল ও দিঘীলীর বিলসহ বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ে জমে থাকা পানিতে পানিফল চাষ করেছেন কৃষকরা। পতিত জমিতে পানি ফল চাষ করে বাড়তি আয় হওয়ায় খুশি চাষি রেজাউল করিম। কম পুঁজি, কম খরচ এবং লাভ বেশি হওয়ায় পানিফলের চাষাবাদ অল্পদিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বলে তিনি মনে করেন। পানিফলটি দেশব্যাপী খুব বেশি পরিচিত নয়। অনেকে হয়তো এখনো চিনেনই না। পানিফল পুষ্টিসমৃদ্ধ, ভেষজ গুণ স¤পন্ন সহজ সরল কৌশলে উৎপাদিত দামি ফল।
আবাদের খরচ নেই বললেই চলে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজবলাইল গ্রামের মৃত সোলেমান আলী আকন্দের ছেলে রেজাউল করিম। গ্রামের বিলে তার ১ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিতে শুধু বোরো মৌসুমে ধানের ফসল হয়। বছরের বাকি সময় তার জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। জমিতে অন্য কোনো ফসল না হওয়ায় সেখানে বিকল্প কিছু করা যায় কিনা, এ চিন্তা থেকেই তিনি পানিফল (শিঙাড়া) চাষ করছেন। পরিকল্পনা করেন। রেজাউল করিম বলেন, যতদিন জমিতে পানি আছে ততদিনই জমি থেকে শিঙাড়া উত্তোলন করা সম্ভব। আমার পতিত জমিতে এ ফল চাষে আমি এতটা লাভবান হবো তা কখনোই ভাবিনি। আমি খুবই খুশি।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার গতন শহর গ্রামের পানিফল চাষি মেহেদী হাসান বলেন, ৪ বছর ধরে পানিফল চাষ করি। এ বছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছি। বিঘা প্রতি পানিফল চাষে ৮-১০ হাজার খরচ হয়। আয় হয় সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। একই এলাকার পানিফল চাষি আনিছ ম-ল বলেন, মেহেদী হাসানের চাষ করা দেখে আমি গত বছর ১০ কাঠা জমিতে চাষ করা শুরু করেছিলাম। লাভ করেছিলাম ১৫ হাজার টাকা। তাই এ বছর আমরা চার ভাই মিলে বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত ৩ বিঘা জলাশয়ে পানিফল চাষ করছি। গত বছরের চেয়ে বেশি ফলও হয়েছে।
কৃষিবিদ ওবায়দুল্লাহ মুসা বলেন, পানিফল ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে, রক্ত আমাশা বন্ধ করে, দৈহিক বিশেষ শক্তিবর্ধক, নারীদের মাজুরতার আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারী। পানিফলেন উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যবহার এসবের ওপর ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এবং সার ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ পরামর্শ ও অনুমোদন করা হলে পানিফল দিয়ে কৃষক ও দেশ অর্থনীতিতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।
জানা গেছে, পুষ্টি ও ভেষজগুণ পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। প্রায় ৯০% কার্বোহাইড্রেড, ৬০% শর্করা আছে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ আঁশ, রাইবোফ্লেবিন, ভিটামিন-বি, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আমিষ, ভিটামিন আছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় পানিফলে খাদ্যশক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১৫ মিলিগ্রাম।
পানিফলের শুধু খাদ্যগুণই না, রয়েছে ঔষধি গুণও। পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ কমে যায়। উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী। বিছাপোকা বা অন্যান্য পোকায় কামড় দিলে যদি জ্বালাপোড়া হয়; তবে ক্ষতস্থানে কাঁচা পানিফল পিষে বা বেটে লাগালে দ্রুত ব্যথা দূর হয়। কাঁচা পানিফল বলকারক, দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। পানিফলে শর্করা ও প্রোটিন আছে যথেষ্ট। শাঁস শুকিয়ে রেখে খাওয়া যায়। কাঁচা, শুকনো, স্যালাড, ওমলেট, শরবত বিভিন্নভাবে পানি ফল খাওয়া যায়। ত্বকের যতেœ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও সতেজ এবং তারুণ্য ধরে রাখতেও পানিফল অনবদ্য।
বগুড়ায় পানিফলের চাষ বাড়ছে ॥ শীত না নামলেও শীতের আগমনীর পরশ এখন চারদিকে। এ থেকে পিছিয়ে নেই শীতকালনী ফল। শীত মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসা অন্যতম ও গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গায় অতি পরিচিত এক নাম পানিফল বা শিঙাড়া। যা শিংরা নামেও পরিচিত। তবে নাম যাই হোক এটি পানিফল বা শিঙাড়া নামেই আমাদের অতি পরিজিত একটি ফল। স্বাদে জিহ্বায় পানি আসে, এমন কিছু না হলেও মনোলভা ঠিকাই। অতি পরিচিত এই পানিফল আবার অনেক দেশে স্রেফ উদ্ভিদ আবার অনেক জায়গায় আগাছা বলে চিহ্নিত হলেও আমাদের গ্রামাঞ্চলে কিন্তু এর চাষ এখন বাড়ছে।
এক সময়ে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ধরনের জলাভূমিতে কোনো যতœ ছাড়াই দেখা যেত এই পানিফল। এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বগুড়াতেও এর বাণিজ্যিক চাষ থেমে নেই। শীতের বার্তা ছড়িয়ে এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় পানিফল তার বর্ণিলতা ছড়িয়ে বিক্রেতাদের পসরায় বিক্রি হতে দেখা গেচ্ছে। নানা গুণের এই বর্ষাজীবী চাষের পানিফলের চাহিদা বাড়ায় এর বাণিজ্যিক উৎপাদনে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। উদ্ভিদ শ্রেণির এই ফলের কদর আমাদের শহর বা গ্রামীণজনপদের সবখানে।
শীতের ঠান্ডা পানি থেকে পানিফল তুলতে গ্রামীণ এলাকায় শিশু কিশোরদের দলবেঁধে পুকুর বা বিলে লাফিয়ে পড়ে পানিতে ভেজার সঙ্গে পানিফলের সন্ধানে ঝাঁপাঝাঁপি এক অন্যরকম আন্দময় দৃশ্য। সামান্য যতেœ এটি গ্রামের জলাশয়ে হয়ে থাকে। এক সময় এটি যতœ ছাড়াই গ্রামাঞ্চলের পুকুর বা বিলে দেখা দেখা যেতে। এখন দিন পাল্টেছে। লাভবান হওয়ায় এটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। অনেক কৃষক জলাশয় বা নিচু এলাকা, যেখানে পানি জমে থাকে সে জায়গা পত্তনি নিয়ে এখন বগুড়ায় পানিফলের আবাদ করছেন।
শীত মৌসুমের এই ফলে স্বাদ অনেকটা পানসে হলেও এর নানা ধরনের পুষ্টি ও ঔষধি গুণ রয়েছে। সবুজ-সাদাটে, কালচে ও লালচে এই তিন ধরনের পানিফল বাজারে দেখা যায়। কাঁচা বা সিদ্ধ দুভাবেই খাওয়া যায় এটি। সালাদ থেকে শুরু করে পানি ফলের রয়েছে নানা রেসিপি। পুষ্টিতে ভরপুর এক সময়ের অযতেœর এই পানিফল নানা রোগের জন্য ঔষধি ফল হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার এটি গুঁড়া করে করে আটা করে (গুঁড়া) নানাভাবে খাদ্য তালিকায় রাখেন। খাদ্য ও পুষ্টিগুণ থাকলেও এটির পরিচিতি কিন্তু নানাভাবে। প্রাচীনকাল থেকে চীনে এটি নানা খাদ্যে ব্যবহার রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকে এটি চীনে খাদ্য হলেও যুক্তরাষ্ট্রে জলজ আগাছা হিসেবে চিহ্নিত।
এর ইংরেজি নাম ওয়াটার টেসনাট আর এটি ট্রাপা নাটানাস পরিবারভুক্ত। এটি যাই হোক এর আবার ঔষধি বা ভেষজ এবং পুষ্টি গুণ নিয়ে এখন পর্যন্ত দ্বিমতের কথা শোনা যায়নি। পেটের অসুখ থেকে নানা ধরনের রোগের ক্ষেত্রে এর গুণাগুণ শেষ করা যায় না। রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। তবে সময় অনুযায়ী না খেলে এ থেকে আবার ঠান্ডা লাগার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এজন্য রাতে বা ভোরে অনেকে এটি কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেন।
বর্ষাজীবী মৌসুমি এই জলজ আবাদে ফল আসা শুরু করে ভাদ্র মাসে। ফল তোলা শুরু হয় আশি^ন কার্তিক থেকে। সাধারণত কার্তিক মাসেই এর ফল বাজারে বেশি আসে।
বগুড়ার গাবতলী, সদর ও নন্দীগ্রাম এলাকাতে বেশি চাষ হচ্ছে পানিফল। এর মধ্যে গাবতলীতেই বেশি। কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় ৩০ হেক্টর জলাভূমিতে পানিফলের চাষ হচ্ছে। এর বেশিরভাগই আবার গাবতলী এলাকায়। গাবতলী কৃষি অফিসার জানিয়েছেন তার এলাকায় শতাধিক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এখন পানিফলের চাষ করেছেন। পুকুর-বিলসহ বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে এর চাষ হচ্ছে।
কম খরচে আবাদে পানিফল চাষিদের লাভ বেশ। কৃষি অফিস জানিয়েছে, ১০/১২ দফা পর্যন্ত এটি কৃষকরা তুলে বাজারে বিক্রি করেন। এতে শীতের শুরুর অনেকটা জুড়ে পানিফল বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। শহরের রাজাবাজার এলাকায় শিঙাড়া বিক্রি করতে আসা দেলোয়ার জানালেন তার বাড়ি গাবতলীর চককাতুলি এলাকায়। সেখাকার একটি বিলে ৪ জনে পানিফল চাষ করছেন। জানালেন, পানিফলের চাহিদা বাড়ছে। প্রতি কেজি বিক্রি এখন করছেন ৪০ টাকা কেজিতে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ে, পসরা বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে পানিফল।