ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

সাটুরিয়ায় নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার 

নিজস্ব সংবাদদাতা,সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জ 

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৮ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২১:৪৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

সাটুরিয়ায় নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার 

দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের জম্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঐ ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার নাগরিকরা।


একটি স্বাক্ষরের জন্য সেবা গ্রহীতাদের আসতে হচ্ছে ঐ অঞ্চলের চেয়ারম্যান এর দায়িত্বে থাকা প্রশাসক (ভূমি কর্মকর্তার)নিকট।ফলে আসা যাওয়ার পথে খরচ করতে হচ্ছে কয়েক শ' টাকা।এ ছাড়াও অনেক সময় সাধারণ মানুষকে প্রশাসকের সাথে দেখা করতেও মিলে না অনুমতি।এতে ঠিকমতো নাগরিক সেবা দিতে না পেতে বিড়ম্বনায় পড়েছে ইউপি সদস্যরাও।ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন পরিষদে প্রাশসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা একদিনও বসেননি ইউনিয়ন পরিষদে।


স্থানীয় বাসিন্দা ফরমান আলী বলেন,তিনি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য জম্ম নিবন্ধনের জন্য যান দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদে।কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে ১৫ দিন ঘুরে তার অফিসের পাশের গোল ঘরে বসে ছিলেন কয়েকদিন।কিন্তু দেখা মেলেনি তার।অথচ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত উপজেলা পরিষদ।এতে কয়েকদিনের যাতায়াত করতে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা এবং অপচয় হয়েছে সময়।


দিঘলীয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম অভিযোগ করে বলেন,তিনি তার জম্ম নিবন্ধনের জন্য তিন ধরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশানর ভূমি কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরছেন। তিনি আরো বলেন কোন কাজের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রশাসকের কাছে বেলা ২ টার পর গেলে স্বাক্ষর করেন না এই কর্মকর্তা। 


সরেজমিনে উপজেলার দিঘলীয়া ইউনিয় পরিষদে গিয়ে দেখা যায়,চেয়ারম্যানের সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জটলা করছিলেন কয়েকজন বেকার যুবক।তারা জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জে পুলিশ লাইনে লোক নিবে।পরিষদের বারান্দায় একটি সনদপত্রের বই রাখা আছে।স্থানীয় বেকার যুবক আকাশ হোসেন,জাকির হোসেন ও আলামিন নিজেরাই লিখে নিচ্ছেন সনদ। ওই সনদ নিয়ে ইউপি সদস্যর স্বাক্ষর করে নিয়ে আসেন প্রশাসকের কাছে। কিন্তু অনেকে বেলা ২ টার পর প্রশাসকের কার্যালয়ে আসলে তাদের সনদে স্বাক্ষর করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা মো.তানভীর আহম্মেদ।


যুবকরা অভিযোগ করে বলেন,দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশত টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েকদিন। বেলা ১১ টার পর তিনি অফিসে বসেন। বসেই অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। আর আমাদের ভূমি অফিসের গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘন্টার পর ঘন্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবে না বলে অফিস থেকে পিয়ন জানিয়ে দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পর চলে যাই। এভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।


গোপালপুরের মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রে এক নাম ও জমির দলিলে আরেক নাম ভুল ক্রমে হয়।একই ব্যাক্তির দৈত্ব নাম থাকায় জমির নাম খারিজ করতে পারছি না।এ বিষয়ে একই ব্যাক্তির দৈত্ব নাম মেম্বার দিয়ে নাগরিক সনদে সত্যায়িত করার পরও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাশাসক এ ধরণের সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।


বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের পর থেকেই দিঘলীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল পলাতক রয়েছেন। তিনি কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অনাস্থা আনেন।এরপর সাটুরিয়া উপজেলা ইউএনও শান্তা রহমান সাটুরিয়া সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা মো.তানভীর আহম্মেদকে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করেন। 


দিঘলীয়া ইউনিয়ন তথ্যসেবার উদ্দ্যোক্তা মো. সামিউল ইসলাম বলেন,আগে এক দুদিনের মধ্যে জম্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া যেত।এখন একটি জম্ম নিবন্ধন সনদ পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।তিনি বলেন, ইউপি সদস্যরা থাকলে প্রশাসক থাকে না।প্রশাসক থাকলে ইউপি সদস্যদের পাওয়া যায় না।চেয়ারম্যান না থাকায় এ ইউনিয়নের মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।


এ বিষয়ে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.মামুন হোসেন বলেন, আমরা সকল ইউপি সদস্যরা বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে সপ্তাহে একদিন পরিষদে বসার অনুরোধ করেছিলাম।কিন্তু তিনি সেই অনুরোধটুকুও না রেখে বসে উপজেলায় তার কার্যালয়ে।এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা পেতে হয়রানিতে পড়েছে।


পরিষদের অন্যান্য ইউপি সদস্যরাও আক্ষেপ করে বলেন,অনুমতি ছাড়া তার কক্ষে প্রবেশ মিলে না।আবার অনুমতি মিললেও প্রশাসকের সাথে দেখা করতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়। 


এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা ও দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো.তানভীর আহম্মেদের কাছে নাগরিক হয়রানির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,কোন নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদে বসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,যে নাগরিকের প্রয়োজন তিনি তার প্রয়োজনেই এসে স্বাক্ষর করে নিতে হবে। 

 

শিহাব উদ্দিন

×