ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

সব হাউজিংয়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপন ॥ যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৫১

মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তা চেয়ে থানা ঘেরাও

ফজলুর রহমান

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তা চেয়ে থানা ঘেরাও

মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তা চেয়ে থানা ঘেরাও

রাজধানীর উল্লেখযোগ্য এলাকা ‘মোহাম্মদপুর’। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস রয়েছে এলাকাটিতে। অনেক বস্তি থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদপুর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুপরিকল্পিত আবাসিক এলাকায় পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি এই এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি, খুনখারাবি ও লুটপাটের মতো ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরে দিনে-দুপুরে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে।

বিহারিদের জেনেভা ক্যাম্পে হরহামেশা গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় অপরাধী চক্রের সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও প্রাণ হারাতে হচ্ছে। জেনেভা ক্যাম্পসহ পুরো এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিরাপত্তা চেয়ে থানা ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয়রা। অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুরু হয়েছে যৌথ অভিযান। অভিযানে দুইদিনে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব হাউজিংয়ে বসানো হয়েছে সেনা ক্যাম্প।
বাংলাদেশে আটকেপড়া বিহারিদের সবচেয়ে বড় আবাসস্থল মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। খুবই ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ঢাকার বিষফোঁড়া হিসেবে পরিণত হয়েছে। কারণ সবধরনের মাদকের কেনাবেচা হয়ে থাকে এই ক্যাম্পে। মাদক সংশ্লিষ্ট সব যেন চলে নির্বিঘেœ। ঢাকাসহ সারাদেশে মাদক কারবারে জড়িত বড় বড় ডনের জন্ম এখানে। জেনেভা ক্যাম্প ঘিরে চলে তাদের আধিপত্যের লড়াই। মাদক কারবারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বহুকাল থেকে বিভিন্ন গ্রুপের গোলাগুলি চলছিল। এতে প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। সম্প্রতি মাদক কারবারিদের বিভিন্ন গ্রুপের হানাহানি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আলাউদ্দিন আমিন (২৭), শফিক (৩২) ও শিশু সাজ্জান (৮) গুলিবিদ্ধ হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় মাদক কারবারিরা। এতে মোটর মেকানিক ওমর ফারুক (২০) ও মাংসের দোকানের কর্মচারী মো. লিটন (৩০) নামে দুইজন আহত হন। গত ১৭ অক্টোবর একইভাবে মাদক কারবারিদের গোলাগুলিতে নিহত হন হোটেল বয় শামনেওয়াজ কাল্লু। এর আগে-পরেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এই ক্যাম্পে।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করলেও ক্যাম্পের অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। তবে ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পের অবস্থা আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন একটি গোয়েন্দা শাখার একাধিক কর্মকর্তা। প্রতিরাতেই কম-বেশি গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সাঁড়াশি অভিযান ছাড়া নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বলে জানান তারা।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট থানা থেকে ছিনতাইকৃত অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে এই ক্যাম্পে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একাধিক চক্র সেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে।     
জেনেভা ক্যাম্পের বাইরেও বৃহত্তম মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বেশ কয়েক মাস ধরে এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফিল্মি স্টাইলে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি হয়ে আসছিল। 
গত ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ মোড়ের কাছে ‘স্বপ্ননীড় হাউজিং’র ৭২০/১ নম্বর বাড়িতে। সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতচক্র ওই বাসা থেকে নগদ ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সাবেক এক সেনা সদস্যসহ বেশ কয়েকজন র‌্যাব সদস্যের নাম উঠে আসে। ১৭ তারিখে শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজার মার্কেটের অফিসের ভেতরে কমিটি নিয়ে মার্কেটের সভাপতি আবুল হোসেন (৫০) ও তার ছোট ভাই মাহবুবকে (৪২) গুলি করে দুর্বৃত্তরা। 
২০ তারিখে মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকায় নেসলে কোম্পানির পণ্য পরিবহনকারী একটি গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে থাকা টাকা লুটে নেয় ডাকাত দলের চার সদস্য। ২৪ তারিখে সোনালী ব্যাংকের কলেজ গেট শাখা থেকে পেনশনের টাকা উত্তোলন করে শপিং ব্যাগে করে মো. খলিলুর রহমান (৭০) নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী যাওয়ার সময় ব্লেড দিয়ে ব্যাগ কেটে টাকা চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। এর পরের দিন বছিলা এলাকায় ধারাল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি সুপার শপ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত মোহাম্মদপুরবাসী নিরাপত্তা চেয়ে থানা ঘেরাও করেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্র-জনতা। শনিবার রাতে থানা ঘেরাও এবং এই আল্টিমেটাম দেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা। 
শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা মোহাম্মদপুর থানায় যান। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশের কার্যক্রমের বিষয়ে আপত্তি জানায় ছাত্র-জনতা। তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হকের সঙ্গে কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা এডিসির কাছে মোহাম্মদপুর এলাকার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছিনতাই রোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। দুইপক্ষের আলাপচারিতায় পুলিশি ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরেন এডিসি জিয়াউল হক জিয়া।
তিনি বলেন, আমার থানায় জনবল কম আছে, এটা সব সময় থাকে, এখন হয়তো আরও একটু কম আছে। থানায় গাড়িও কম আছে। এগুলো কোনো অজুহাত হতে পারে না। আমি যখন এই পোশাকটা (পুলিশের পোশাক) ধারণ করেছি, আমার দায়িত্ব মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন তেজগাঁও জোনের এই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার।
ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলেও পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুলিশ ও ছাত্র-জনতা মিলেমিশে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।   
দুইদিনে গ্রেপ্তার ৫১, সব হাউজিংয়ে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প ॥ রবিবার থেকে মোহাম্মদপুরের প্রতিটি হাউজিংয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প বসায় সেনাবাহিনী। এসব ক্যাম্প থেকে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। চলছে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান। অভিযানে দুইদিনে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঢাকা উদ্যান এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে সেনা, র‌্যাব ও পুলিশের টহল। এর আগে শনিবার রাত একটার দিকে বছিলায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এসব নিয়ে কথা বলেন ২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপঅধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ।
রবিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালান সেনা, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, নবোদয় হাউজিং, চন্দ্রিমা উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, একতা হাউজিং ও নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। শনি ও রবিবার এ নিয়ে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করল যৌথবাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। 
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর বছিলার সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তা ও ২৩ ইস্ট বেঙ্গল উপঅধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কোথাও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটলে, সেনাবাহিনীকে তথ্য দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেজর নাজিম বলেন, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটিতে ছিনতাইকারী, ডাকাত দলের সদস্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে ৪৫ জন এবং রবিবার জেনেভা ক্যাম্প থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 
দুই সপ্তাহ ধরে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত শুক্রবার বছিলায় একটি সুপারশপে ডাকাতির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ও মামলার প্রধান আসামি মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। 
সেনা কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদপুরে ২৭-২৮টি কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করা হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ছয়বার অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যত গ্রেপ্তার হয়েছে এর ৩০ শতাংশ জেনেভা ক্যাম্পের। ওই এলাকা থেকে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬১টি গুলি, ১৯ রকমের মাদক, একটি গ্রেনেড ও ৮০টি দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। 
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঢাকা উদ্যানে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। মনির মার্কেটের পাশে এই ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ক্যাম্প থেকে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সবগুলো হাউজিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার আলী জানান, মোহাম্মদপুরে নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপরাধ দমনে যৌথবাহিনী কাজ করছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তবে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের একটাই দাবি, তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাত ও মাদকমুক্ত এলাকা চান। মোহাম্মদপুরকে কলুষিত করেছে গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মহল। তাদের ছত্রছায়ায় মাদক কারবারিরা মাদক ব্যবসা করে আসছিল। এলাকায় সন্ত্রাসী লালন-পালন করত। তাই বর্তমান সরকারের আমলে তারা পুরো মোহাম্মদপুরকে অপরাধমুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান।

×