গুটি পেঁয়াজের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না রাজবাড়ীর চাষিরা
গুটি পেঁয়াজের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না রাজবাড়ীর চাষিরা। যে কারণে পেঁয়াজ লাগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এতে জেলার পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ চাষ গতবারের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।
পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেই হিসাবে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে বিক্রি পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। যেমনÑ জমি প্রস্তুত, গুটি, সার-কীটনাশক, পেঁয়াজ একটু বড় হওয়ার পর নিড়ানো, কালি ভাঙ্গা, পরিশেষে বিক্রি করার আগে শ্রমিক দিয়ে পেঁয়াজ ওঠানো এবং তারপর তা কাটানো এবং পরিবহন করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা পর্যন্ত ধাপে ধাপে ব্যয়। এর মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে পানি সেচের ব্যবস্থাও করতে হয়।
চাষিরা আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে পেঁয়াজ চাষ। আবার টানা বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে এসেছে চাষের সময়। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। এবার এখনো পর্যন্ত পেঁয়াজ লাগানোই সম্ভব হয়নি। সব মিলে এবার পেঁয়াজ লাগানোর আগে চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যে কৃষক বা চাষি ৫ বিঘা পেঁয়াজ লাগায়, সেই কৃষক ২ বিঘা লাগাবেন। অনেক চাষি পেঁয়াজ লাগানো থেকে বিরত থাকবেন।
কৃষক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, গুটি, সার-কীটনাশক, শ্রমিকের শ্রম সবকিছুর দাম বেড়েছে। এবার এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগাতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এত টাকা ব্যয় হলে বিক্রি করব কত টাকা মণ? তিনি বলেন, প্রতিবছর ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়ে থাকি। গুটিসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় মাত্র ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর চিন্তা করেছি। আমার মতো অনেকে পেঁয়াজ লাগানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
অন্য এক কৃষক বলেন, আমরা নিশ্চিত নই পেঁয়াজ ওঠানোর পর কত টাকা মণ বিক্রি করতে পারব। যে টাকা ব্যয় হচ্ছে তাতে ৫ হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। সুতরাং আমাদের সাধারণ কৃষকের এমন নিশ্চয়তা কে দেবে। বাধ্য হয়ে আমরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
জুলহাস কাজী নামে পেঁয়াজের গুটি ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গুটির দাম দ্বিগুণ। যে কারণে গুটি পেঁয়াজের চাহিদা অনেক কম। বাজারে অনেক ক্রেতা আছে, কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। আবার যে ৫ বিঘা জমিতে লাগানোর গুটি নেবে, সে ২ বিঘার গুটি নিচ্ছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, এবার যে পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে তাতে কৃষক বাঁচাতে হলে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।
একাধিক কৃষক বলেন, যেখানে বিক্রির নিশ্চয়তা নেই, সেখানে সাধারণ কৃষক সাহস করে এত টাকা ব্যয় করে পেঁয়াজ লাগাব কীভাবে। কৃষক বাঁচাতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
জেলার সেরা কৃষক হুমায়ুন আহমেদ বলেন, এক বিঘা জমিতে এক লাখ ২০-৩০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। আবার টানা বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক এবার ২০-২৫ দিন পিছিয়ে পড়েছে পেঁয়াজ লাগাতে। তিনি বলেন, প্রতিবছর কমপক্ষে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়ে থাকি। এখনো লাগানো হয়নি। হয়তো ৩-৪ বিঘা লাগাতে পারি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে এবার রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ লাগানো পিছিয়ে গেছে। তবে, লক্ষ্যমাত্রা কমবে না, বরং বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।