নিষ্কাশন খালে বাঁধ দেওয়ায় তিন মাসেও বন্যার পানি নামছে না
রামগঞ্জ উপজেলার পানিয়ালা থেকে টিওরি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খালে ছোটবড় ৫০টি বাঁধ রয়েছে। বাড়ির রাস্তা ও ফসলি মাঠ থেকে ইটভাঁটিতে মাটি আনা-নেওয়ার জন্য এসব বাঁধ দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
এ ছাড়া খালটির কমাররোড ও দুধরাজপুরবাজার অংশ পুরোটা অবৈধভাবে দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় এসব বাঁধ ও দোকানঘর নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। খালে এসব বাঁধের কারণে সাম্প্রতিক বন্যার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে খালটি পাশ^বর্তী ৯নং ভোলাকোট ও ১০নং ভাটরা ইউনিয়নের টিওরি, দুধরাজপুর, আকরতমা বিহারিপুর, হীরাপুর, দক্ষিণ ভাটরা, নলচারা গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ এখনো জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ, দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষক।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই কিলোমিটার খালে মাটি দিয়ে ভরাট করা ৫০টির বেশি বাঁধ রয়েছে। কেউ কেউ পাকা করেছেন। বাঁধের কারণে পানির স্্েরাত না থাকায় আগস্টে শুরু হওয়া বন্যার পানি এ এলাকায় এখনো রয়ে গেছে। বাড়িঘরের পানি কিছুটা কমছে । কিন্তু মাঠে টুইটম্বর পানি। কমাররোড বাজার ও দুধরাজপুরবাজর এলাকায় খালের বেশিরভাগ অংশ দখলে নিয়ে দোকান নির্মাণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০ বছর আগে প্রথম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজান মিয়ার ভায়রাভাই শেখ মন্তাজ মিয়া খাল ভরাট করে বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করে।
এরপর থেকে আঃ করিম, শিরু মিয়া, শেফায়েত উল্যাহ, খোকন, নুরু মিয়া, শিপন মিয়া, আঃ ওদুদ, শামছুল হকসহ প্রভাবশালীরা এসব বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধ দিতে বা খাল দখল করে দোকান নির্মাণে মানুষ অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখেনি তারা।
টিওরি গ্রামের বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেন (৮০) বলেন, ছোটবেলা থেকে খালটি দেখে আসছি। আগে এ খালে খুব ¯্রােত ছিল, নদী থেকে বিভিন্ন জাতীয় মাছ আসত, সবাই মাছ ধরত, খালের পানি দিয়ে নলচারা, টিওরি, আকরতমা মাঠে চাষাবাদ হতো। ২০ বছর আগ থেকে মানুষ খালে বাঁধ দেওয়া শুরু করছে। অনেকে খালের সঙ্গে টয়লেটের লাইন দিয়ে রাখছে। এত পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর ¯্রােত নেই, মাছ নেই। শুকনো মৌসুমে পানির অভাব, বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ময়লা পানির কারণে খালটি এখন মানুষের গলাকাটায় পরিণত হয়েছে। আকরতমা গ্রামের হারুন মিয়া বলেন, প্রশাসন যদি দখলকারীদের নিকট থেকে খালটি উদ্ধার না করে। কয়েক বছর পর এ খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
স্থানীয় কৃষক হারুন, ইউছুপ, আঃ মান্নান, মোহাম্মদ হোসেন বলেন, খালে বাঁধের কারণে এখনো মাঠভরা পানি। বীজতলা তৈরি, মাঠের জমি পরিষ্কার করা কোনো কিছু করতে পারিনি। তাই এ বছর চাষাবাদ নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি। প্রশাসনের নিকট দাবি, খালের মধ্যে বাঁধগুলো কেটে দিলে দ্রুত পানি সরে যাবে। কৃষক চাষাবাদ করতে পারবে। খাল ভরাট করে প্রথম বাঁধ নির্মাণকারী শেখ মন্তাজ মিয়ার বড় ছেলে হাবিব জানান, আমার বাবা অনেক বছর আগে পাইপ দিয়ে বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এখন যদি পানি চলাচলে সমস্যা হয়। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব।
খাল দখলকারী আঃ ওদুদ মিয়া বলেন, কেউ খাল দখল করে বাড়ি-রাস্তা করেছেন, কেউ ইটভাঁটির মাটির আনা-নেওয়ার জন্য রাস্তা করছেন, তাই আমরাও বাড়ি-রাস্তা করেছি। সরকার যদি সবার বাঁধ কেটে দেয়। আমরা নিজেরাই কেটে দেব।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, এতদিন যাবত বন্যার কারণে বাঁধগুলো বোঝা যায়নি। যেহেতু পানি কমে আসছে, এখন আমরা যে যে খালে বাঁধ আছে, তা শনাক্ত করে দ্রুত কাটার ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাও আমরা আইনানুগভাবে দেখব।