ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বগুড়ায় আওয়ামী লীগের উদ্দেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর

ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাই

ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, যে আদালতে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে বিচার করা হয়েছিল, সেই আদালতে তাদের আসতে হবে। বিচার হবে, আমরা চাই না তাদের ওপর জুলুম হোক। আমরা চাই ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে। ন্যায়বিচারে যে পাওনা তারা পাবে, তাতে তাদের সাধ মিটে যাবে। তিনি বলেন, যারা এদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, আগামীতে তাদের দেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।

এ প্রসঙ্গে তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, জুজুর ভয় দেখাবেন না, জাতিকে বোকা ভাববেন না, এদেশের মানুষ খুনিদের প্রকাশ্যে হাঁটতে দেবে না। আগে তাদের বিচার হবে। তিনি শনিবার বিকেলে বগুড়া আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বিশাল সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বগুড়া জেলা ও শহর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি গোলাম রব্বানীসহ মাওলানা আবাদুর রহিম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হক, অধ্যাপক আব্দুল মালেক প্রমুখ। সমাবেশে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, সেই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছে। দেশে এনে তাদের বিচার করতে হবে।
প্রধান অতিথি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গুম-খুন, নির্যাতনের তা-ব চালানো হয়েছে। কোনো মায়ের বুক খালি হয়েছে, কেউ হয়েছেন সন্তানহারা, অসংখ্য মানুষ হয়েছেন এতিম, অনেকে হয়েছেন পঙ্গু। ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতের একজন নেতাও শাস্তির ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। 
ফাঁসির মঞ্চে গেছেন, কিন্তু কাঁদেননি। তিনি বলেন, কারা দেশ থেকে পালায়, যারা দেশকে নিয়ে মেকি কান্না কেঁদেছে, তারাই পালিয়েছে। ভালো মানুষ দেশ থেকে পালায় না। তিনি বলেন, আমরা তাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করিনি। তাদের অপকর্মই তাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। পিলখানায় হত্যাকা-ের মাধ্যমে দেশে যে জুলুম শুরু হয়েছিল তার শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে। জামায়াতে ইসলামীকে সবচেয়ে মজলুম দল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতের প্রথম সারির ১১ জন নেতাকে খুন করেছে। আর কোনো দল এই দাবি করতে পারবে না। 
তিনি বলেন, জাতিকে আর কেউ বিভক্ত করতে পারবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ মর্যাদাবান নাগরিক। প্রত্যেকেই শান্তিতে উপাসনা করবে। জামায়াতের বিরুদ্ধে অন্য কারও জমি দখল, চাঁদাবাজি করা বা মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করার অভিযোগ নেই। যদি কেউ বিশ^াসযোগ্য অভিযোগ করতে পারেন, তাহলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইব।
তিনি গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, আমাদের বক্তব্য আপনাদের চাদর দিয়ে ঢাকবেন না। নিজেদের মতো উপস্থাপন করবেন না। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদদের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি, কারণ শহীদদের কোনো দলের অংশ করতে চাই না। আমরা তাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে দেখি। তিনি বলেন, এ দেশ সবার। আমরা চাই কোনো বৈষম্য থাকবে না। প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না।

আমরা বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক দেশ চাই। তিনি আাওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা বলেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পাঁচ লাখ লোক খুন হবে। কিন্তু বিপ্লবের পর জাতি প্রমাণ করেছে, আমরা শান্তিপ্রিয় ও দেশকে ভালোবাসি। কারণ পাঁচজনও মারা যায়নি। তরুণ সমাজের প্রতি তিনি তার আস্থার কথা উল্লেখ করেন।

×