ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

পুলিশবন্ধুর সহযোগিতায় স্ত্রী হত্যা, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

পুলিশবন্ধুর সহযোগিতায় স্ত্রী হত্যা, গ্রেপ্তার ২

হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী

বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যায় স্বামী। এরপর বন্ধুরা মিলে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম করে পালিয়ে যায়। এ  ঘটনার পর পিবিআই অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্ত এবং ক্লুলেস মার্ডারের রহস্য উদঘাটন করে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘাতক স্বামী বিদেশে পালিয়ে গেলেও তার পুলিশবন্ধুসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই আরও জানিয়েছে,  স্ত্রীর অগোচরে আরও একটি বিয়ে করার পর দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় বন্ধুদের নিয়েই কিলিং মিশনে নামে পাষাণ স্বামী।শনিবার সকালে নগরীর পাহাড়তলী বারকোয়ার্টার এলাকার পিবিআই এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে পিবিআই কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান। 

গ্রেপ্তার দুইজন হল মো. জাহেদ ওরফে নাবেদ ও পুলিশ কনস্টেবল মো. ইরফান। এ দুইজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার শেখ জয়নুদ্দীন জানান, ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত হত্যাকাণ্ড বিধায় পিবিআই এটির রহস্য উদ্ঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৮ অক্টোবর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামী মো. জাহেদ ওরফে নাবিদকে (৩০)  আগ্রাবাদের হাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাহেদ জানায়, কালামিয়ার বাজার থেকে ভিকটিম আমেনা বেগমকে প্রাইভেট কারে বহন করে আসামী মো. ইরফান হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর প্রাইভেট কার চালক মো. সোহেলের (৩৫) হেফাজত থেকে প্রাইভেটটি জব্দ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার প্রাইভেট কারে ইরফান ও ইয়াছিন আরাফাতসহ ভিকটিম আমেনা বেগমকে  স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। সে আরও জানায়, ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত, গ্রেপ্তার হওয়া ইরফান হোসেন ও  জাহেদকে গভীর রাতে  চায়না ইকোনোমিক জোন সংলগ্ন পাহাড়ের দিকে যেতে দেখে। এ ঘটনার  দুই দিন পরে পাহাড় সংলগ্ন ব্রিকফিল্ডে আমেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার জাহেদ ও প্রাইভেট কার চালক সোহেলের তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ অক্টোবর অপর আসামী পুলিশ কনস্টেবল ইরফান হোসেনকে (২৯) তার কর্মস্থল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার গুলশাখালী পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পিবিআই জেলা কার্যালয়ে আনা হয়। পুলিশ কনস্টেবল ইরফানকে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এরপরই তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পিবিআই জেলা পরিদর্শক রতন শেখ জানান, জাহেদ ও ইরফানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে জানায় যে, ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত (২৭) তাদের বন্ধু। ইয়াছিন তার স্ত্রী আমেনার অগোচরে পুনরায় বিয়ে করে। নতুন সংসারে আমেনাকে কেন্দ্র করে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হতে পারে এ অনুমান করেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমেনাকে বেড়ানোর কথা বলে চালক সোহেলের কারে করে কালামিয়া বাজার থেকে ইরফানের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে আমেনাকে সুকৌশলে বাড়ির নিকটবর্তী চায়না ইকোমিক জোন সংলগ্ন পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে ঘাতক স্বামী ইয়াছিন আরাফাতসহ তার সহযোগীরা উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। হত্যা পর লাশ গুম করার জন্য পাশর্^বর্তী একটি পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ডে লুকিয়ে রাখে।

এদিকে, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার (এসআই) তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘটনার পর পর ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত বিদেশে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। এ ঘটনার সাক্ষী হিসাবে কার চালক সোহেল ১৬৪ ধারায় সাক্ষী দিয়েছেন। জাহেদের স্বীকারোক্তি এবং শনাক্তমতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার এবং গাড়িটিও জব্দ করা হয়। অপরদিকে, জাহেদ ও আসামী পুলিশ কনস্টেবল ইরফান হোসেন আদালতে এ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানাধীন বৈরাগ চায়না ইকোমিক জোন অফিসের পূর্ব পাশের একটি পাহাড় ঘেরা পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ডে অজ্ঞাতনামা মহিলার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।  বৈরাগ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন (৩৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানার মামলা করেন। আনোয়ারা থানা পুলিশ পিবিআই চট্টগ্রাম জেলাকে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় উদ্ঘাটনের জন্য সহযোগিতা চায়। তখন পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন টিম ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় শনাক্ত করে জানায়, ভিকটিমের নাম আমেনা বেগম (৩৩)। ওই নারীর বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর বলুয়ার দিঘীর পাড়ে আবুল কালামের কলোনিতে থাকে।

তাওফিক

×